বড় গর্ত, ছোট পুকুর লামায় ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কে

লামায় ফাইতং-বানিয়ারছড়া চলাচল অনুপযোগি সড়ক। ছবি : লামা প্রতিনিধি

রেহানা মোস্তফা, লামা প্রতিনিধি : কার্পেটিং, ইট, বালু, খোয়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়ক। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত হয়ে ছোট ছোট পুকুর ও খালে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করে বোঝার উপায় নেই সড়কটি পাকা না কাঁচা। একদিন বৃষ্টি হলেই সপ্তাহের বেশি সময় পানি জমে থাকে সৃষ্ট গর্তগুলোতে। বেহাল এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, বর্তমানে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়কের বেশির ভাগ স্থানে প্রয়োজনীয় জায়গা এবং মাটি না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে ফাইতং ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যাপক যানবাহন চলাচল, আবার ফাইতং ইউনিয়নে স্থাপিত ইট ভাটাগুলো থেকে বড় বড় ট্রাক যোগে ধারণ ক্ষমতার বেশি ইট, পাথর, বালু ও গাছ পরিবহনের কারণেই খোয়া ও বিটুমিন উঠে পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাস ধরে সড়কের এ বেহাল অবস্থা বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ভোগ লাঘবে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সড়ক সংস্কার না হলে, এমন দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

মাঝে মধ্যে দায়সারা সংস্কার করলেও তা কোনো কাজে আসে না বরং মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে যে কাজ করা হয় তা সামান্য পানিতেই ধুয়েমুছে যায়। কখনো বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের পানি গড়িয়ে সড়কের ওপর পড়ার কারণেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সড়কের ওপর দিয়ে ধারণ ক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল বন্ধসহ দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান স্থানীয়রা।

অভিজ্ঞমহলের মতে, প্রতিবছর সংস্কার কাজ করে কোনো লাভ নেই। সড়কটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন নকশার পরিবর্তন ও ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো। তা না হলে একদিকে কাজ হবে, অন্যদিকে বৃষ্টিতে ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে দুর্ভোগ। কাজের কাজ কিছুই হবে না।

এলাকাবাসী জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বানিয়ারছড়া থেকে উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটি প্রায় ২০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মাণ করে। এটি দুর্গম পাহাড়ি বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ও অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ। ফাইতং ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের আজিজনগর ও গজালিয়া ইউনিয়নের জনগণ এবং মালামাল পরিবহনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। এই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় হাজারো ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। বছর জুড়ে এসব যানবাহনে ধারণ ক্ষমতার বেশি ইট, পাথর, বালু ও গাাছ পরিবহনের কারণে সড়ক ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে যায়। আবার কখনো অতিবৃষ্টির ফলে পানি গড়িয়ে সড়কের ওপর পাড়ার কারণে বালু, খোয়া ও বিটুমিন উঠে পুরো সড়ক জুড়ে খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়ের পানি গড়িয়ে পড়ে ধসে পড়ছে সড়কটির দু’পাশ। এতে করে দিন দিন সরু হয়ে যাচ্ছে সড়কটি।

সম্প্রতি সরেজমিনে সড়কের চার কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। পুরো সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের কিছু অংশ ধসে পাশের নিচে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, জীপ, সিএনজি, মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। বিশেষ করে সড়কের ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়, ফাইতং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফাইতং বাজারস্থ অস্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এতে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন খানাখন্দে আটকে পড়ে। এ সময় সিএনজি চালক সাইফুল ইসলাম, ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আরকান সড়ক থেকে ফাইতং যেতে যেখানে বড়জোর ১৪-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে সময় লাগছে প্রায় এক ঘন্টা। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। প্রতিদিন এ সড়কে ছোট খাট দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে, যে কোন সময় এই সড়কে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

ফাইতং মৌজা হেডম্যান –্উ¤্রামং মার্মা, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য থোয়াইহ্লা মার্মা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি থোয়াইন সানু মার্মা বলেন, সড়কটির এমন করুণ অবস্থা বিরাজ করছে যে, একদিন বৃষ্টি হলে এই সড়কের ভাঙাচেরা অংশে সপ্তাহ খানেক পানি জমে থাকে। এতে যান বাহন চলাচল দুরের কথা, পায়ে হাঁটাও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এমনকি কিছুদিন পূর্বে এক গর্ভবর্তী নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই ডেলিভারী হয়ে যায়।

ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কের বেহলা অবস্থার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লামা উপজেলার সার্ভেয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা জানান, ভারি যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সড়কটির এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ফাইতং এলাকায় স্থাপিত ইটভাটাগুলো থেকে মাত্রাতিরিক্ত ইটসহ বালু, পাথর ও গাছ পরিবহনের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন করা হলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

শেয়ার করুন