শহর আমার, দায়িত্ব কার ?

মাহমুদুল হক আনসারী : শহর আমার দায়িত্ব কার! মানুষের প্রয়োজনে গ্রাম শহর হচ্ছে। প্রয়োজনে মানুষ শহরে আসছে। গ্রামের মানুষের প্রয়োজনেই শহরে আসতে হয়। এখানে রয়েছে সরকারী অফিস আদালত হাসপাতাল। লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ রয়েছে শহরে। যারা নিয়মিত শহরে এসে তাদের কাজে যোগদান করেন। আবার দৈনিক কর্মশেষে বাড়ি ফিরতে হয়।

পোশাক খারখানার লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ দৈনিক পরিবহন ব্যবহার করে কর্মস্থলে যাওয়া আসা করতে হয়। মালিক শ্রমিক সকলেই নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে আসা যাওয়া করতে হয়। সময় মতো কর্মস্থলে না পৌঁছাতে পারলে উৎপাদন কার্যক্রমের ব্যাঘাত হয়। কর্মজীবীদের জবাবদীহি করতে হয়। অফিস টাইম রক্ষা করতে না পারলে চাকরী চলে যায়। জটিল ও মুমূর্ষরোগীদের শহরের বড় চিকিৎসাকেন্দ্রে আনতে হয়। কথা হচ্ছে শহরে প্রবেশ কারো জন্যই নিরাপদ যাতায়ত হচ্ছে না। শহরের সবগুলো প্রবেশ মুখে কী সকাল কী বিকেল, নিত্যসময় যানজটের নাকালে পড়তে হয় কর্মজীবী মানুষদের। ঘন্টার পর ঘন্টা কর্ম সময় গাড়ীতে রাস্তায় চলে যায়।

শহর প্রশাসনের মালিক সিটি কর্পোরেশন। শহর শৃংখলার মালিক ট্রাফিক পুলিশ, আইন-শৃংখলা বাহীনি। এসব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো ধরনের আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। শহরজুড়েই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ, আইন শৃংখলা বাহিনী। কোথায় গাড়ী থামবে কোন স্পটে গাড়ী রাখবে। সব কিছু একটা নিয়ম থাকার পরও পরিবহন ও যান চলাচল ট্রাফিক শৃংখলা জনজীবনে পাওয়া যাচ্ছেনা।

 

পরিবহন মালিক শ্রমিক নিত্যদিন রাস্তায় নানা জাতের গাড়ি নামাচ্ছে। গাড়ির সঠিক কাগজ পত্র অনেক গাড়ীর নেই। টোকেন দিয়ে মালিক শ্রমিকদের সাথে যৌথ বাণিজ্যে রাস্তায় এ গাড়ী চলছে বলে জানা যায়। কোন রুটে কত পরিমান গাড়ী চলবে তার কোনো হিসাব মিলছেনা। রাস্তার চেয়ে গণপরিবহণ বেশী। সাথে এক একজন মানুষের জন্য একটা করে প্রাইভেট গাড়ী। ছাত্র ছাত্রীদের গার্ডিয়ানরা নিয়ে আসে স্কুল টাইমে একটা একটা প্রাইভেট গাড়ী। রাস্তায় কোনো পার্কিং এর অনুমতি না থাকলেও রাস্তায় এ পরিবহন গুলোর পার্কিং করে রাখা হয়। রাস্তার দু পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে এসব গাড়ীর পার্কিং। বাস, ট্রাক, টেম্পু, টেক্সী, রিক্সার পার্কিং সারা শহরজুড়েই চোখে পড়ে।

ফুতপাত অনেকটাই বেদখল। জন চলাচলের জন্য ফুতপাত পাওয়া যায়না। জনগণ ফুতপাত ব্যবহার করার কোনো সুযোগ পাচ্ছেনা। সারা শহরের ফুতপাত হকারদের দখলে। এসব হকারদের বসিয়েছে এক শ্রেনীর চাঁদাবাজ। তাদের সাথে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ। প্রতিদিন একজন হকার থেকে নেয়া হয় ২০-১০০ টাকা পর্যন্ত। ফুকপাত যেই দখল করে বসবে তাকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে বসতে হবে। চাঁদা ছাড়া কোনো হকার ফুতপাত রাস্তায় বসতে পারেনা। এ ফুতপাত কারা নিয়ন্ত্রণ করে। কাদের হাতে রাস্তার দোকান আর ফুতপাতের ক্ষমতা্। এ বিষয় সমাজ প্রশাসন অবগত আছেন, কিন্তু এর সুরাহা কী জনভোগান্তির সমাধান কী হবে সেটা কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেনা।

নগর জীবন শৃংখলার জন্য সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন রয়েছে। রযেছে চট্রগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। মেট্রোপলিটন পুলিশ, ট্রফিক পুলিশ। এত সব বিভাগ থাকার পরও জনজীবনে শহরমূখী মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকছেনা। তাহলে শহর রক্ষার দায়িত্ব কার? নিয়মিত গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলছেনা। কোনো কোনো এলাকায় সাপ্তাহে কয়েকদিন পানি মিলছেনা। বিদ্যুৎ থাকেনা বহু বাণিজ্যিক এলাকায়। গ্যাস নাই, বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই। নিত্য পণ্যের লাগামহীন মূল্য, সব মিলিয়ে নগর জীবন এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পতিত। কে নেবে এসবের দায়িত্ব।

প্রতিদিন চোখে দেখা এসব সমস্যা জনভোগান্তি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নজরে আসলেও সুরাহার কোনো সমাধান দেখছেনা নগরবাসী। পরিবহন শৃংখলা, মালিক শ্রমিক শৃংখলা যাত্রী সাধারণের জীবনের নিরাপত্তা ও রাস্তার যানজট মুক্ত করতে প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হবে। ফুতপাতের জায়গা দখল ও চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হবে। ফুতপাত জন চলাচলের জন্য মুক্ত রাখতে হবে। অবৈধ গনপরিবহণ নিয়ন্ত্রণ ও সব ধরনের চাঁদাবাজ ক্যাডার নিয়ন্ত্রন চাই।

মাননীয় জেলা প্রশাসনকে শহরবাসীর ভোগান্তি লাগবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ফুতপাত দখলমুক্ত রাখার দাবী রাখে জনগন।রাস্তার ফুতপাত দোকান হকার থেকে চাঁদাবাজের উৎখাত চায় নগরবাসী। শহরের শৃংখলা রক্ষায় সবধরনের পরিবহনকে শৃংখলার আওতায় আনতে হবে। ক্যাডার চাঁদাবাজ, রাস্তা ও ফুতপাত দখলকারী সিন্ডিক্যাট চিহ্নিত করে জনগণের স্বার্থে শহর প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।

দেশী বিদেশী কোনো অথিতি শহরে প্রবেশ করলে দেখা যায় রাস্তায় য়ানজট। এ সংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়। রাস্তার শৃংখলা রক্ষা হলে কারো জন্য যানজট হবেনা। দেখা যায় রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কোনো কর্তা থেকে শুরু করে বিদেশী কোনো মেহমান আসলেই রাস্তায় খবর হয়ে যায় অমুক আসছে, তাই যানজট সৃষ্টি। অমুকের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। খেলার জন্য, খেলোয়াড়ের জন্য এ পথ বন্ধ। এ ধরনের বক্তব্য আর সংস্কৃতি এখন আর বিশ্বের কোথাও নেই। আধুনিক যুগে আধুনিক ভাবে মানুষের চলাচল বেড়েছে। সেই মন্দা আমলের চিন্তা আর বুদ্ধি দিয়ে দেশ চালানো ঠিক না। বাংলাদেশে দেশী বিদেশী অথিতি আসবে সেটাই কাম্য। সে অজুহাত কোনো অবস্থায় রাস্তার যান চলাচলে জন ভোগান্তি প্রত্যাশিত নয়। জনকাম্য নয়। কোনো অবস্থায় কোনো মেহমানের আগমনকে উদ্দেশ্য করে রাস্তার যেন জ্যাম না হয়, ভোগান্তি না হয় সেটায় প্রশাসনকে চিন্তায় রাখা দরকার।

শহর আমার। শহরের শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও সব মানুষের রয়েছে। সকলকে সচেতনতার মধ্যে শহরের সমস্ত শৃংখলা রক্ষায় কাজ করতে হবে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তার জন ভোগান্তি দূর করুন। প্রশাসনের সব স্তরে সমন্বয় করে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চায় জনগণ।

লেখক : মাহমুদুল হক আনসারী, প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিষ্ট মোবাইল: ০১৮১৪৮৭৩৩৫৪

শেয়ার করুন