সাপ্তাহিক গণশুনানি
ভুক্তভোগীর অভিযোগ শুনে চমেক হাসপাতালের আয়াকে অব্যাহতি

সাপ্তাহিক গণশুনানি

চট্টগ্রাম : নাসিমা বেগম। বাঁশখালী থেকে তার মেয়ের চিকিৎসা নিতে এসে চমেক হাসপতালে অপমানিত হয়েছেন। তাকে নাজেহাল করেছেন এক আয়া। হাসপাতালের গণশুনাতিতে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী নাসিমা বেগম। পরে হাসপাতাল পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন তাৎক্ষণিকভাবে ওই আয়াকে চিহ্নিত করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গণশুনানিতে ভুক্তভোগী নাসিমা বলেন-‘আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম অব্যবহৃত স্যালাইন দোকানে ফেরত দেয়া যাবে কিনা। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়ার্ডের আয়া আমাকে চুল ধরে বের করে দেবেন বলেছেন। বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। খুব অপমানিত হয়েছি।যদি মেয়ে কিছুটা সুস্থ হতো এখনই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতাম।’

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সাপ্তাহিক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে হাসপাতাল পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দিনসহ বিভাগীয় প্রধানসহ দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।

আনোয়ারা থেকে রোগী নিয়ে আসা মোহাম্মদ জামালের অভিযোগ ওয়ার্ডের গেটকিপার তার কাছ থেকে চা খাওয়ার জন্য ৬০ টাকা নিয়েও তাকে ঢুকতে দেননি।

একই অভিযোগ আরেকজন ভুক্তভোগীরও। তিনি বলেন, রোগীর ওষুধ, জরুরি ইঞ্জেকশন, পথ্য নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও হাতে টাকা গুঁজে না দিলে ঢুকতে দেন না আনসার সদস্য ও গেটম্যানরা।

তিনজন কিডনি রোগী উদ্বেগ জানিয়েছেন ৪২০ টাকায় প্রতি সেশন ডায়ালাইসিসের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে।

তাদের উদ্দেশে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে চমেকে। ভারতের স্যানডরের সঙ্গে পিপিপি’র অধীনে আমাদের রয়েছে অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার। যেখানে ১০ হাজার সেশন আমরা ৪২০ টাকায় দিতে পারছি। এ ছাড়া কিডনি ওয়ার্ডে পুরোনো নয়টি ডায়ালাইসিস মেশিনও সচল আছে। ফ্রি সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরি মেনে চলতে হয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করব সর্বোচ্চ সংখ্যক সেশন কম ফি’তে বা বিনামূল্যে দিতে।

কুতুবদিয়ার মো. ইদ্রিসের অভিযোগ, তার স্ত্রী নাসিমা বেগমের ডেলিভারির সেলাই জোড়া লাগেনি এক মাসেও। এখনো পুঁজ বের হচ্ছে। তিনি কষ্ট পাচ্ছেন।

একজন নারী অভিযোগ করেন দালালদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, রক্ত সংগ্রহ ও ওষুধপত্র কেনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দালালদের হাতে রোগীরা জিম্মি হয়ে পড়ছেন।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমরাও দালাল নির্মূলের চেষ্টা করছি। আমাদের নিরাপত্তাকর্মী সংকট আছে। তবুও আমরা পুলিশ ও আনসারের সহায়তা নিচ্ছি। একা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালমুক্ত করতে পারবে না। তাই রোগীর স্বজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চসিক, সাংবাদিক সবাইকে সচেতন হতে হবে, দালালদের প্রতিরোধ করতে হবে।

লোহাগাড়ার বড় হাতিয়ার রমজান আলীর অভিযোগ তার ১০ মাস বয়সী নাতনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর শয্যায় ভর্তি আছেন নয় দিন। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। প্রথম দিকে একটু সুস্থ হয়ে উঠলেও এখন অসুখ বেড়ে গেছে। বড় ডাক্তাররা রোগী দেখেন না।

শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, চমেক হাসপাতালে প্রথম যে চিকিৎসক রোগীকে দেখেন তিনি জুনিয়র ডাক্তার নন। তিনি একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। অথচ রোগীর স্বজনরা মনে করেন সিনিয়র ডাক্তার দেখেননি। এটা বিশ্বাসের অভাব। সিরিয়াস রোগীর ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়।

চমেক হাসাপাতালের পরিচালক বলেন, মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ গণশুনানির আয়োজন। অভিযোগকারীদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের কাছে রোগীদের স্বার্থ সর্বাগ্রে। আমরা তিনটি অভিযোগ বাক্সও রেখেছি। সেখানেও অভিযোগ দেওয়া যাবে।

তিনি জানান, চমেকের সেবা নিয়ে আগামী ২৭ মার্চ বেলা ১১টায় দুদকের গণশুনানি হবে। এর আগে দুদক মহাপরিচালক হাসপাতাল পরিদর্শন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার করুন