দায় সারা হরতাল
সজীবের পরিবারের খবর নেয়নি পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠন

নিহত মাইক্রোবাস চালক সজীবের পরিবারের আহাজারি।

দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত মাইক্রোবাস চালক সজীব হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠনগুলো হরতালের নামে নাটকীয় কর্মসূচি দিলেও নিহত সজীবের পরিবারের খবর নেয়নি কেউ।

হত্যার প্রতিবাদে প্রথমে ৭২ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষনা করা হলেও ১২ ঘন্টা পালন করার পর হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। আবার কেউ কেউ ঢাকায় এসিরুমে বসে থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি দিয়ে নাটকীয়ভাবে আবারও তা প্রত্যাহার করে নেয়। অপরদিকে অন্য একটি গ্রুপ হরতালের পক্ষে পিকেডিং করলে ভয়ে, আতঙ্কে চরম জনদুর্ভোগে পরে পার্বত্যবাসী।

এইভাবে প্রতিবাদের নামে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে দায় সাড়ছে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।

নিহত সজীবের দাফন কাপন ঠিকভাবে হল কিনা, তার সাত বছর বয়সী একমাত্র ছেলে শিহাব হাসানকে নিয়ে স্বামী হারা স্ত্রী মৌসুমি আক্তার কেমন আছেন এই খবর কেউ না নিলেও বরিশাল মাঠ বাড়ীয়া থানার গুইসা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সজীবের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি কার এ রেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহআলম ও মোঃ হোসেন।

গত ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী সালাউদ্দীন, মহরম আলী ও গাড়িচালক বাহার মিয়া জেলার মহালছড়ির মাইসছড়ি থেকে নিখোঁজ তিন জনকে উদ্ধার এবং দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সজীব হত্যার প্রতিবাদে ৭২ ঘন্টার হরতালের ডাক দিলেও ১২ ঘন্টা পালন করার পর রবিবার ৬ মে সন্ধা ৬টা থেকে ৬০ ঘন্টার হরতাল প্রত্যাহার করে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের একাংশ মাঈন উদ্দিন সমর্থিত পার্বত্য অধিকার ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদ।

অপরদিকে একই দাবিতে ঢাকায় এসিরুমে বসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ফেইসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আলকাস আল মামুন ভূইঁয়ার আহব্বানে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘন্টার হরতাল ঘোষনা দিয়ে আবার সোমবার (৭ মে) দুপুরে ফেইসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

পার্বত্য বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের অপর অংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দু মজিদ, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব এর স্বারিত প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৬ মে রাতে একই দাবিতে আবারও ৪৮ ঘন্টার হরতাল দিয়ে ৭ মে সকালে থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে পিকেডিং করে গাড়ী ভাংচুর শুরু করে হরতাল সমর্থনকারীরা।

এসময় নজরুল ইসলাম মাসুদসহ চার কর্মীকে পুলিশ আটক করার পর হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সমঝোতার মাধ্যমে তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলে জানান, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের অপর অংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দু মজিদ।

এই বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন টিটু বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে বিভিন্ন সংগঠনের সকল প্রকার কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। জেলায় কোন অবরোধ নেই গাড়ী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে কেউ আটক নেই বলেও জানান ওসি।

তবে, সহকর্মীর হত্যার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসুচি অব্যাহত রেখেছে রেন্ট এ কার মালিক ও চালক সমিতি। রেন্ট এ কার সমিতির সদস্য নিহত সহকর্মী সজীব হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হল চত্ত্বরে সকল প্রকার কার মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে রেন্ট এ কার মালিক ও চালক সমিতি।

এসময়, সকল কার্যকরি সংগঠনের মোঃ ইউনুছ, রেন্ট এ কার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহআলম, চালক সমিতির সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম, সম্পাদক কামাল হোসেন সদস্য মোঃ হোসেনসহ মালিক ও চালক সমিতির সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থেকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সহকর্মী মাইক্রোবাস চালক সজীবের খুনিদের খুজে বের করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান।

উল্লেখ্য, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে গত শুক্রবার সকালে একই উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তদের পাঁচজন নিহত ও আটজন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া গত ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার তিন বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী সালাউদ্দীন, মহরম আলী ও গাড়িচালক বাহার মিয়া জেলার মহালছড়ির মাইসছড়ি থেকে নিখোঁজ হন। ১৯ দিন পরও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন।