বেইলি ব্রিজে পাকা সেতু : বদলে যাচ্ছে পাহাড়ী জনপদ

খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া সিন্ধুকছড়ি সড়কে ৭০-৮০ দশকে তৈরি ঝুঁকিপূর্ন বেইলী ব্রীজেরস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন পাকা সেতু।

শংকর চৌধুরী : অরণ্য আর পাহাড় বেষ্টিত পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। ভূপ্রাকৃতিক কারণে ভিন্নরূপ রয়েছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এখানকার অধিকাংশ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে। বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বেইলী ব্রিজ। তবে এগুলো এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের আন্তরিকতায় ওইসব বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে তৈরী করছে পাকা সেতু। ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পাহাড়ী জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্বস্তি ফিরেছে পার্বত্যবাসীদের মাঝে।

পাহাড় ধসসহ নানা কারণে পাহাড়ি সড়কের ভোগান্তিও রয়েছে। এছাড়া পার্বত্যঞ্চলে ৭০-৮০ দশকে নির্মিত বেইলী ব্রীজগুলো সড়কের আতংক হিসিবে পরিচিত। পাহাড়ি ছড়ার উপর বা নদীর উপর নির্মিত এসব বেইলী ব্রীজ ভেঙে প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। আর বেইলী ব্রীজ দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। বর্ষায় বেইলী ব্রীজের ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়। এসব পুরনো লক্কর ঝক্কর বেইলী ব্রীজ নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে খাগড়াছড়ি বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সরকারের কাছে।

দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবার স্বপ্নপুরনের পালা। এরই প্রেক্ষিতে বেইলী ব্রীজ সরিয়ে পাকা সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ী জনপদ খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঝুঁকিমুক্ত করতে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে একাধিক সড়কে বেইলী ব্রীজের জায়গায় নির্মিত হচ্ছে পাকা সেতু। এতে সড়কে যাতায়াতকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পাকা সেতুতে যান চলাচল করছে।

খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া সিন্ধুকছড়ি সড়কে ৭০-৮০ দশকে তৈরি ঝুঁকিপূর্ন বেইলী ব্রীজেরস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন পাকা সেতু।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,সরকারের অর্থায়নে বেইলি ব্রীজের স্থলে পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় দীর্ঘ কয়েক দশকের ভোগান্তি কমছে। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৩৩ কিলেমিটার দূরে জালিয়াপাড়া সিন্ধুকছড়ি মহালছড়ি সংযোগ সড়ক প্রায় ২৪ কি.মি দীর্ঘ সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। এই সড়কে তিনটি স্থানে ইতিমধ্যে পাকা সেতু নির্মিত হয়েছে। এই পথে চলাচলকারী চালকরা জানান, সড়ক যোগাযোগ ভালো থাকলেও বেইলী ব্রীজ ছিল ভোগান্তির মূল কারণ। সড়কে যাতায়াতে এটি ছিল প্রধান বাধা। একবার বেইলী ব্রীজ ভাঙলে সংস্কারে দীর্ঘদিন সময় লাগত। কিন্ত বর্তমানে অবস্থা পাল্টেছে। দীর্ঘদিন পর হলেও পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ নিরাপদ হয়েছে।

কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন যুবক জানান, সিন্ধুকছড়ি বাজার থেকে জালিয়াপাড়া যেতে এই সড়কটি একমাত্র যোগাযোগের পথ। সড়কের একাধিক স্থানে বেইলী ব্রীজে পারাপার হতে হত। নড়বড়ে এসব ব্রীজে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটত। এই সড়কে তিনটি জায়গায় বেইলী ব্রীজের জায়গায় পাকা সেতু নির্মিত হয়েছে। কেবল জালিয়াপাড়া কিংবা সিন্ধুকছড়ি সড়কেই নয় পাকা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে জালিয়াপাড়া রামগড় সড়কেও। রাজধানী ঢাকার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার যোগাযোগের জন্য এটি একমাত্র সড়ক। প্রতিদিন যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি শত শত মালবাহী ট্রাকসহ নানা যানবাহন এই পথে যাতায়াত করে। অতীতে একাধিকবার এই সড়কে বেইলী ব্রীজ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। মালবাহী ট্রাকের চালক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘এই সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি প্রায় ১২ বছর। সড়কের একাধিক স্থানে ছড়ার উপর থাকা বেইলি ব্রীজ এরকম আতংক ছিল। বিশেষত মাল বোঝাই অবস্থায় চলাচল করতে গেলেই ব্রীজে পাটাতন খুলে গিয়ে কিংবা ব্রীজের রেলিং ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটত। তিনি জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও সরকার এসব ঝুঁকিপূর্ন স্থানে পাকা ব্রীজ নির্মাণ করায় আতংক দূর হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ির রামগড়, জালিয়াপাড়া সিন্ধুকছড়ি সড়কে ৪ টা সেতু ও ৩ টি কালভার্ট নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ । এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে সিন্ধুকছড়ি সড়কের তিনটি ব্রীজের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।

অন্যদিকে রামগড় সড়কেও কয়েকটি ব্রীজের উপর যান চলাচল করছে। রামগড় পাতাছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রীজে ঢালাইয়ের কাজ করছে শ্রমিকেরা। ব্রীজ প্রকল্প প্রকৌশলী মানিক চন্দ্র দাস বলেন, সড়কটি গুরর্ত্বপূর্ণ হওয়ায় দ্রুত নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ডিসেম্বর নাগাদ এই সড়কের সবকটি ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এর মধ্যে কয়েকটি কালভার্টও রয়েছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর অর্থায়নে ব্রীজ গুলোর নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস জাকির এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোঃ জাকির হোসেন জানান, পাহাড়ি এলাকায় কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। ছড়ার তীব্র স্রোতসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। মেয়াদের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোসহেল উদ্দিন জানান, পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ছড়া এবং নদী রয়েছে। আশি বা নব্বই দশকে এসব ছড়ার উপর বেইলি ব্রীজ নির্মিত হলেও তা এখন নড়বড়ে হয়েছে। ফলে সড়কে যোগাযোগ সুরক্ষা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।

খাগড়াছড়িতে সওজ এর আওতায় প্রায় ৪‘শ কিলোমিটার সড়কে একাধিক স্থানে বেইলি ব্রীজ ছিল। কিন্ত সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় জনগুরর্ত্বপূর্ণ স্থানে এখন পাকা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাহাড়ি সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত এবং এই জেলা বাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।