দেশের ১৪০ বছরের জীবন্ত সাক্ষী রিতা রানী

দেশের ১৪০ বছরের জীবন্ত সাক্ষী রিতা রানী

হাবিবুর রহমান সোহেল : ব্রিটিশ যুদ্ধ দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তখন যৌবন ছুঁই ছুঁই। গ্রামের মেঠোপথে বেণী দুলানো মেয়েটি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন হাসতে হাসতে। কেটে গেছে বহু বসন্ত। ‘৪৭-এর দেশভাগ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন আর ৭১’ মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও নানান চড়াই-উৎড়াই দেখতে দেখতে এখনও বেঁচে আছেন। বয়স গুণে গুণে ১৪০। তাঁর নাম রিতা রানি। ৭ ছেলে আর ৩ মেয়ের জননীর জন্ম এবং বেড়ে উঠা কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতার পাড়া হিন্দু পাড়ায়। বয়সের ছাপ জ্বল জ্বল করছে দেহময়। একটু কষ্ট হয় তবুও হেঁটে চলাফেরা করেন। বাজার সওদাও করেন কোন কোন দিন। মাঝে মাঝে চোখে ঝাপসা দেখেন। এসব তথ্য দিয়েছেন রিতার ৩য় ছেলে।

এলাকাবাসীর দাবী বয়স নির্ধারণে বিজ্ঞানের সহায়তা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে রিতা। দেশের সুনামও বয়ে আনতে পারেন প্রায় দেড়শ বছরের জীবন্ত সাক্ষী।

তাদের দাবী বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪০ বছর বয়সের এখনো জীবিত মানুষটি হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতার পাড়া হিন্দু পাড়ার রিতা রানী।

অবিশ্বাস হলেও সত্যি যে, দীর্ঘ বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটির স্মৃতি শক্তি এখনো পুরোপুরি বিদ্যমান রয়েছে। দেশে গড় আয়ু যেখানে ৭০ বছর সেখানে দেশে দেড়শত বছরের কাছাকাছি জীবিত রিতাকে নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিলে তাঁর নাম গ্রীনিস বুকে লেখাতে পারলে বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম বাড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতার পাড়ার বাসিন্দা ওসমান গনি, আবু তালেব সিকদার সহ এলাকাবাসির ও তার পুত্রদের তথ্যমতে ওই মহিলার বর্তমান বয়স ১৪০ এর কম-বেশি হবে। স্থানীয় সুত্রমতে রিতারানীর জন্ম হয়েছে ব্রিটিশ যুদ্ধের অনেক আগে। রানীর পিতার নাম মৃত অরবিন্দু ও মাতার নাম মৃত রানী বালা। রানীর ৩য় ছেলে (সত্তোর্ধ) জানান, তার বড় ভাইয়ের বয়স ১০০ এর উপরে বোনের বয়সও ৮৫ এর কম নয়।

রানীর ছোট ছেলে জানায়, অনেক ছোটবেলা থেকে মাকে বৃদ্ধাবস্থায় দেখে আসছি। কিছুদিন আগেও মা পায়ে হেঁটে বাজারে যেতেন। বাজার করতেন। ধারনা করছে অনুমানিক ১৪০-১৪৫ বছরের বয়সের ভারে ক্রমান্বয়ে ন্যুয়ে পড়ায় এখন আর ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। কীভাবে এত বছর বেঁচে আছেন ও জন্ম কি ব্রিটিশযুদ্ধের আগে কি-না জানতে চাওয়া হলে রানী এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্রিটিশতো সেদিনের কথা। এর আগেই তিনি বিয়ে করেছেন এবং তার ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের আছে বলে জানায়।

সমাজ সেবক ও ইউপি মেম্বার জয়নাল আবেদীন জানান, রানীর বয়স যদি হয় ১৪০ তাহলে এটি বাংলাদের জন্য গর্বের ও সম্মানের। গ্রীনিচ বুকে বর্তমানে সর্বোচ্ছ ১১৭ বছর বয়সের অধিকারি হচ্ছে জাপানের নাবি সাজাকো। সরকার চাইলে জাপানের সে রেকর্ড ভাংতে পারে রানীর বর্তমান বয়স দিয়ে।

সিভিল সোসাইটি ফোরাম কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসিরা মনে করছেন, বর্তমানে অধিক বয়সের অধিকারি হচ্ছে ওই রিতা রানী। সরকার উদ্যোগ নিলে তার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক বয়স নিরুপণ করতে পারবে। আর যদি তার বয়স ঠিকই ১৪০ হয় তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে নতুন পরিচিতি পাবে। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করেন।