সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য
সাংসদ বাসন্তী চাকমাকে অপসারণের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

সাংসদ বাসন্তী চাকমাকে অপসারণের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে প্রথম বারের মত জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ মনোনীত বাসন্তী চাকমা ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালিদের নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে সংসদ সদস্যের পদ থেকে তার অপসারণের দাবীতে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড়ের দুই বাঙ্গালী সংগঠন।

শনিবার (২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য অধিকার ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: মাঈন উদ্দিন।

এসময় পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মো: লোকমান হোসেন, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদ, মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি রবিউল হোসেন, পার্বত্য অধিকার ফোরামের জেলা সভাপতি এসএম হেলাল, পার্বত্য নারী অধিকার ফোরামের জেলা আহবায়ক সালমা আহমেদ মৌসহ সংগঠন দুটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্যোগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় দৃঢ়তার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সাংসদ বাসন্তি চাকমা সেই সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা ন্যাক্কারজনক। তার এ বক্তব্য তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত সকল বাঙ্গালিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন।

বাসন্তীকে চাকমা পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক সংগঠনের প্রধান মূখপাত্র উল্লে­খ করে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালিদের নিয়ে সংসদে দেয়া মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাকে অপসারণ করা না হলে আগামী ৩রা মার্চ খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষনা দেয় সংগঠন দুটি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত মঙ্গলবার (২৬শে ফেব্রয়ারি) পার্বত্য চট্টগ্রামের মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা সংসদে তার জন্য নির্ধারিত স্বাগত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত শতকারা ৫১ শতাংশ বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপবাদমূলক, মিথ্য ও বানোয়াট কল্পকাহিনী তুলে ধরেন। তার বক্তব্যের মূল অংশ ছিলো উগ্র সাম্প্রদায়িক। প্রথমে ১৯৮৬ এবং পরে ১৯৯৬ সালের ১লা মে নিয়ে সংসদে বাসন্তী চাকমা যে বক্তব্য রাখেন তা ছিল সম্পূর্ন অসত্য। তার কথার কোন ভিত্তি নেই। সেদিন জেলার পানছড়িতে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি।

লিখিত বক্তব্যে মাঈন উদ্দিন বলেন, বাসন্তী চাকমা মনগড়া ভাবে সংসদে বক্তব্য উপস্থাপান করে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও মিথ্যা বক্তব্যের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। তার বক্তব্যে তৎকালীন গেরিলা নেতা সন্তুলারমার শান্তিবাহিনীর খুনিদের ভাই সম্বোধন করলেও দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে খুনী ও বাঙ্গালীদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে।

এতে আরো অভিযোগ করা হয়, বাসন্তী চাকমা সংসদে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে শান্তিবাহিনী সৃষ্টির ইতিহাস তুলে না ধরে শান্তিবাহিনীর সদস্যদের নিজের ভাই বলে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগের লেভেল গায়ে দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থেকে মূলত সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার ছিলেন। যেই তিনি সংসদে যাবার সুযোগ পেলেন, সেই তিনি স্বরুপে ফিরে আসলেন বলে দাবী করেন সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দরা।

অভিযোগ করা হয়, বাসন্তী চাকমা শান্তিবাহিনীর কোন্দলে সন্তু ও প্রীতি গ্রুপের দ্বন্ধে বহু সাধারণ উপজাতীয়দের জীবননাশের কথা বললেও সুকৌশলে তিনি বাঙ্গালী গনহত্যার কথা এড়িয়ে গিয়ে বাঙ্গালীদের বহিরাগত ও সেটেলার বলে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে আবারো পাহাড়ের পরিবেশ  অস্থিতিশীল করার পায়ঁতারা করছে বলে অভিযোগ করা হয়। ফলে সন্ত্রাসীদের আবারো পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির দিকে উৎসাহিত করছেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সংগঠনগুলোর নেতারা ৩রা মার্চ খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেন। এছাড়া অবিলম্বে সাংসদ বাসন্তী চাকমা কর্তৃক সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে সংসদে দেয়া মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর কর্মসূচীর ঘোষনা দেয়।

উল্লে­খ, ২৬শে ফেব্রুয়ারি সাংসদ বাসন্তি চাকমা জাতীয় সংসদ অধিবেশনে- প্রথমে ১৯৮৬ এবং পরে ১৯৯৬ সালের ‘১ মে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও তৎকালীন বহিরাগতরা মিলে আল্লাহু আকবর বলে পানছড়ি ব্রীজের উপর একজন একজন করে পাহাড়ীদের জবাই করেছিলো’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা।