এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
এসপির তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত, ওসি বললেন এসআই নির্দোষ

অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক আমির হামজা

সীতাকুণ্ড মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হামজার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া, মামলায় জব্দ হওয়া গাড়ি আত্মসাৎ, আসামির কাছ থেকে টাকা আদায় ও হয়রানির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রাণী সাহা এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে তদন্ত করে জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে এ প্রতিবেদন (স্মারক নম্বর-১৭৮) জমা দেন।

আরো পড়ুন : মনের জগত প্রসারিত না হলে জীবনের অর্থ সংকীর্ণ
আরো পড়ুন : ফিলিপাইনে ভূমিকম্প, নিহত ১১

এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশও করেছে ওই প্রতিবেদনে। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ১০ মার্চ ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এসআই আমির হামজাকে সীতাকুণ্ড থানা থেকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রাণী সাহা’র দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও সীতাকুণ্ড মডেল থানার মালামাল ও সম্পত্তি রেজিস্ট্রার ও মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এসআই আমির হামজা বিধি মোতাবেক জিম্মাকারীর নিকট গাড়িটি জিম্মা প্রদান না করে আদালতের আদেশ অমান্য করে, অসৎ উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি দেখায়। গাড়িটি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে জিম্মাকারীকে (মোতাহের হোসেন) ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মানামায় সই নেয়। তাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ২য় তলায় অফিস কক্ষে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে আটক করে রাখে। রাতে মোতাহের হোসেনকে কম দামে কারটি বিক্রি করার প্রস্তাব দেয় এবং বিক্রি না করলে প্রাইভেটকারটি ফেরত দিবে না বলে জানিয়ে দেয় আমির হামজা। পরে আমির হামজার পরিচিত এক চালকের সহায়তায় সেই প্রাইভেটকারটি থানা থেকে বের করে নিয়ে যায়।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন না করে অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রাইভেটকার অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার ফলে পুলিশ বিভাগের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করার সুপারিশ ও মতামত প্রদান করা হলো।’

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ একটি প্রাইভেটকার ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা। পরে ফেনসিডিলসহ প্রাইভেটকার ও কাভার্ডভ্যান সীতাকুণ্ড মডেল থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব সদস্যরা। ওই মামলার আসামি মোতাহের হোসেন আদালত থেকে জামিনে এসে হাইকোর্ট থেকে প্রাইভেটকার জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত ১০ লাখ টাকার বন্ডে সেই প্রাইভেটকার মোতাহের হোসেনের জিম্মায় দেন। মোতাহের হোসেন অভিযোগে জানান, গতবছরের ১১ ডিসেম্বর মোতাহের হোসেন সীতাকুণ্ড মডেল থানা থেকে প্রাইভেটকারটি জিম্মায় নিতে আসলে প্রথমে কমমূল্যে বিক্রির প্রস্তাব দেয় এসআই আমির হামজা। মোতাহের হোসেন গাড়িটি বিক্রি করবেন না বলে জানালে তাকে থানায় হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে আটকে রাখেন। এ সময় মোতাহের হোসেনের মোবাইল, মানিব্যাগ ও ঘড়ি কেড়ে নেয়। পরে মোতাহের হোসেনকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই আমির হামজা। সর্বশেষ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।

এসআই আমির হামজা তার মোবাইল ফোনে আটক অবস্থায় মোতাহের হোসেনের ছবি তুলে। পুনরায় গাড়িটি বিক্রির প্রস্তাব দেয়। পরে গাড়ি মেরামত বাবদ মোতাহের হোসেনের কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা নিয়ে ফেলেন এসআই আমির হামজা।

পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থাকা এসআই আমির হামজা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী মোতাহের হোসেন গাড়ি থানা থেকে নিয়ে গেছেন। নিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর তিনি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’ তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) তার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা তদন্তাধীন কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সীতাকুণ্ড থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এসআই আমির হামজা সম্পূর্ণ নির্দোষ। অভিযোগকারী মোতাহের হোসেন একজন মাদক ব্যবসায়ী ও প্রতারক। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসএসপি সীতাকুণ্ড সার্কেল তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন তিনি এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বুঝতে পারছি না।