পুলিশের মহানুভবতা…

পুলিশের মহানুভবতা…

চট্টগ্রাম : দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন ছাড়াও পুলিশ বহু মানবীয় কাজ করে। এবার আরো একটি মানবীয় কাজ করলো পুলিশ। ব্যস্ত নগরীর সড়কে পরে থাকা এক নবজাতককে পরম মমতায় কোলে তুলে নিলেন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান। কুকুরের মুখ থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে প্রথমে মা ও শিশু হাসপাতাল এবং পরে চমেক হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশের ওই কর্মকর্তা। একই সাথে নেন শিশুর মানসিক ভারসাম্যহীন মাকেও। এখন মা মেয়ে দুজনই ভাল আছেন। সুস্থ আছেন। দুজনেরই চিকিৎসা চলছে।

আরো পড়ুন : চট্টগ্রামের শিল্পপতির স্ত্রী কানাডা থেকে ফিরেই বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ভোরে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের আক্তারুজ্জামান সেন্টারের ঠিক উল্টো দিকে, সোনালী ব্যাংকের সামনে এমন দৃশ্য বহু লোক দেখছিলেন খুব কাছ থেকে। তাদের একজন বলেন, বেশি কিছুই বলব না। এমন মহানুভবতা, পুলিশের আরো একটি জ্বলজ্বল দৃষ্টান্ত।

আরো পড়ুন : বাকলিয়ায় বিউবো’র অভিযানে ৯ মামলা, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশি কিছুই বলব না। এমন মহানুভবতা পুলিশের আরো একটি জ্বলজ্বল দৃষ্টান্ত। আর উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজ বলেন, রাতের ডিউটি শেষে দলের সহকর্মীদের সঙ্গে আক্তারুজ্জামান সেন্টারের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওই সময় রাস্তার উল্টো দিকে সোনালী ব্যাংকের সামনে দুটি কুকুরকে মারামারি করতে দেখি। আরেকটি কুকুর কিছু একটা নিয়ে টানাটানি করছিল দেখে কৌতুহল হয়। এগিয়ে দেখি একটা বাচ্চা, মনে হলো সদ্যজাত শিশু। কুকুরগুলো তাকে নিয়ে টানাটানি করছে। আমি তখন ওই রাস্তায় প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়া এক নারীর সাহায্য চাইলাম। তিনিও এগিয়ে আসলেন। রাস্তার পাশে একটি টং দোকান থেকে কাপড় নিয়ে বাচ্চাটাকে মুড়িয়ে ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে পরিষ্কার করে দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

আমি আবার ছুটলাম মেডিকেলের দিকে। যাওয়ার পথে বাদামতলী মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় জনতা ব্যাংকের সামনে আনুমানিক ২৫ বছর বয়েসী এক নারীকে খানিকটা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় বসে থাকতে দেখি। আমি থমকে দাঁড়াই। ওই সময় স্থানীয়রা জানায়, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন, রাস্তাতেই থাকে। নাম জিজ্ঞেস করলে কথা বলছিল না। শুধু রাস্তার উল্টো দিকে দেখাচ্ছিল হাত দিয়ে। ওই জায়গাতেই বাচ্চাটাকে নিয়ে কুকুরগুলো টানাটানি করছিল।

মোস্তাফিজ বলেন, ওই নারীর ইশারা-ইঙ্গিত থেকে ধারণা করছি সোনালী ব্যাংকের সামনে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর রাস্তার অন্যপাড়ে এসে বসে ছিলেন তিনি। আর কুকুরগুলো তখন নবজাতকের গায়ে লেগে থাকা নাড়ি নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে নবজাতকের সঙ্গে ওই নারীকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসক বলেছেন, বাচ্চা সুস্থ আছে। কুকুরের কামড় নবজাতকের শরীরে লাগেনি। আর ওই নারীকে গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আশিকুর রহমান জানান, আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংকের সামনে তিনটি কুকুর বাচ্চাটিকে নিয়ে টানাটানি করছিল। সেখানে দায়িত্বরত ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজ সেটা দেখে বাচ্চাটাকে উদ্ধার করে প্রথমে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শেয়ার করুন