বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিধি লংঘন করে কমিটি গঠন

বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল

চট্টগ্রাম : বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বাতিল এবং নতুন অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া, অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধেও স্কুলের বিধি-বিধান লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট ২৯ অক্টোবর অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং শর্ত দেন। এতে বলা হয়, আদালতের আদশের প্রত্যায়িত প্রতিলিপি প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে মো. মাঈন উদ্দিনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। না হলে চলমান ম্যনেজিং কমিটি বাতিল হবে।

যে কারণে স্কুলের পড়ালেখা ব্যহত হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলের অভিভাবকরা। স্কুলের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে তারা শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ইতোপূর্বে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রধান শিক্ষক প্রার্থী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনকে স্কুলে নিয়োগ না দেয়াসহ আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে চিঠিতে তিনি স্কুলের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের নির্দেশ দেন।

আরাে পড়ুন : শখের মোটরসাইকেল কেড়ে নিল বাবলুর প্রাণ
আরো পড়ুন : বিচারপতি সিনহাসহ ১১জনকে গ্রেফতারে পরোয়ানা

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্ট অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং শর্ত দেন।

এতে বলা হয়, আদালতের আদশের প্রত্যায়িত প্রতিলিপি প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে মো. মাঈন উদ্দিনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। না হলে চলমান ম্যনেজিং কমিটি বাতিল হবে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, ছয় মাসের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও আদালতের প্রত্যায়িত আদেশ আসার সাত কার্যদিবসের আগেই আদালতের আদেশ অমান্য করে স্কুলের ওই সময়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে তড়িঘড়ি করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়।

শুধু তাই নয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে অশিক্ষিত ও বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে সভাপতি করে গত পাঁচ নভেম্বর একটি অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করে শিক্ষাবোর্ড। প্রাথমিক স্কুলে এখন স্নাতক পাস শিক্ষানুরাগীকে স্কুল সভাপতি করতে বলা হয়েছে সেখানে বর্তমান সভাপতি অশিক্ষিত। তাছাড়া তিনি হত্যা মামলার আসামি। এমন একজন সভাপতির জন্য স্কুলের শিক্ষা পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

আদালতের আদেশ অমান্য করে স্কুলের অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, আদালতের আদেশ তো আমরা পাইনি। এ ধরণের অভিযোগ আমি অবশ্যই খতিয়ে দেখবো। তিনি বলেন, আমি তো অনুমোদন দেয়ার কেউ না। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিবই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল, অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। স্কুলের সভাপতি বিতর্কিত কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অভিযোগের বিষয়টি আমি দেখবো।

বিদ্যালয়ের বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে আমি মেট্রিক পাস করেছি। সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছি। ওই সময় সনদ জালিয়াতি হতো না। আমি অশিক্ষিত হলে আমি আপনার সঙ্গে কিভাবে এত সুন্দর করে কথা বলছি। যারা স্কুলের ভাল চায় না তারাই আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি একক সিদ্ধান্তে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষক মাঈন উদ্দিনকে স্কুলে নিয়ে আসেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে কর্মরত স্কুল থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই অবৈধভাবে টানা ২/৩দিন তিনি স্কুলে অফিস করেন। অথচ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গার্লস স্কুল থেকে যেমন নিয়োগ পত্র দেয়া হয়নি, তেমনি বর্তমানে তিনি যেখানে আছেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

তিনি বর্তমানে অন্য একটি স্কুলের (আল জাবের ইনষ্টিটিউট স্কুল) সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হলে মাঈন উদ্দিন আর এই স্কুলে আসছেন না। তবে তিনি দ্রুত ছাড়পত্র নিয়ে স্কুলে যোগদানের জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে খোদ জানিয়েছেন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ছাড়পত্র আনার সঙ্গে সঙ্গেই মাঈন উদ্দিনকে আমরা নিয়োগ দিয়ে দেব। এখনো ছাড়পত্র আনতে না পারায় নিয়োগ পত্র দিতে পারছি না।

জানা গেছে, শিক্ষক মাঈন উদ্দিন যখন এই স্কুলের শিক্ষক পরীক্ষায় প্রথম হন, যখন তাকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিতে চাননি, তখন শিক্ষক মাঈন উদ্দিন স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ পঞ্চম আদালত, চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করেন।

মামলা এখনো বিচারাধীন। নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই তাকে কিভাবে শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলীর চিঠি মোতাবেক বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার জন্য কতদিন সময় দেয়া হবে সেই প্রশ্নও উঠেছে।

আদালতে আপনার মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আপনি কিভাবে নিয়োগ পত্র ও ছাড়পত্র ছাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস করেছেন জানতে চাইলে শিক্ষক মাঈন উদ্দিন বলেন, আমি এখনো আলজাবির স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আছি, পরে কথা বলবেন বলেই মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এ বলা হয়েছে, ম্যানেজিং কমিটির কোন বিশেষ সভা, জরুরি সভা ডাকতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে নোটিশ দিতে হবে। আর সাধারণ সভার জন্য অন্তত সাত দিন পূর্বে সদস্যদের নোটিশ দিতে হবে।

কিন্তু বর্তমান অ্যাডহক কমিটি একদিনের নোটিশে জরুরি সভা করেন। জরুরি সভায় একটির অধিক আলোচ্য বিষয় রাখার বিধান না থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে একাধিক আলোচ্য বিষয় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইভাবে কমপক্ষে সাত দিনের নোটিশের জায়গায় বিধি ভঙ্গ করে তিনদিনের নোটিশে সাধারণ সভা করেন।

আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ নাসির মিয়া জানান, বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির এবং ব্যক্তিত্বহীন মনে হওয়ায় মাঈন উদ্দিনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ম্যানেজিং কমিটি এবং এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির পূর্ণ আইনগত অধিকার রয়েছে।

এব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসার জেয়ন্ত বারই দৈনিক নয়াবাংলাকে বলেন, ২০০৯ সালের প্রবিধানমালা অনুসারে ভোটার তালিকা যাচাই বাছাই করার এবং তপশীল ছাত্রীদের নোটিশ দিয়ে জানানোর বিষয়ে যাচাই বাছাই করার দায়িত্ব প্রিজাইডিং অফিসারের না। এ কাজগুলো নির্ধারীত করবেন স্কুলের আগের কমিটি। আমাকে ডিসি মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে আমি তাই করেছি।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মধুসুদন দাশ দৈনিক নয়াবাংলাকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার আমার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু স্কুল কমিটির সভাপতি আমাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আমি আর কিছু বলতে পারবো না। আপনাদের কিছু জানার থাকলে সভাপতির কাছ থেকে জেনে নিন।

এ ব্যাপারে এডহক কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মো.সফিকুল ইসলাম দৈনিক নয়াবাংলাকে বলেন, মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাকে ডিও লেটার দিয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম, আমাকে অনুমোদনদেন। আমার কমিটি আইনগত ভাবে ঠিক আছে। কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে। যথাযথভাবে প্রবিধানমালা মেনেই স্কুল কমিটি গঠিত হয়েছে। কোনো জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন হয়নি।

শেয়ার করুন