‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ ভাস্কর্য উদ্বোধন সীতাকুণ্ডে

‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ ভাস্কর্য উদ্বোধন সীতাকুণ্ডে

চট্টগ্রাম (সীতাকুন্ড) : মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সৈন্যদের স্মরণে সীতাকুন্ডে নির্মিত ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) পাহাড়ের পাদদেশে ‘সীতার কুন্ডের’ (সীতার স্নানের স্থান) পাশে নির্মিত এ ভাস্কর্য উদ্বোধনশেষে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, আমার বাবাও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন পাইলট ছিলেন। এ জন্য আমি গর্বিত।

আরো পড়ুন : চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহবান ডিসির
আরো পড়ুন : সিএমপি কমিশনারের সাথে ভারতীয় হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

আমরা সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকব। আশা করি বাংলাদেশও আমাদের পাশে থাকবে। আমরা যৌথভাবে রচিত করব নতুন ভবিষ্যৎ। যোগ করেন হাই কমিশনার। এসময় ভারতীয় সৈন্যদের আত্মত্যাগ মনে রাখার জন্য সীতাকুন্ডবাসীকে বারবার ধন্যবাদ জানান এই কুটনৈতিক।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। মোশাররফ বলেন, যুদ্ধ বিজয়ের মাত্র ৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সীতাকুন্ড উপজেলার ছোট দারোগার হাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত সড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান নেয় মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। বিকেল নাগাদ তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে। ৫ দিনব্যাপী চলতে থাকা এই সম্মুখ যুদ্ধে অসংখ্য হানাদার নিহত হলে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানিরা।

অপর দিকে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ বন্ধ করে উল্লাস করতে থাকে। এমন সময় তাদের হঠাৎ আক্রমণ করে হানাদারেরা। অতর্কিত আক্রমণে প্রাণ হারান মিত্রবাহিনীর অর্ধশতাধিক ভারতীয় সৈন্য ও অনেক বাঙালি সৈন্য। আবারও প্রতি আক্রমণ করে মিত্র বাহিনী। আর তাতে টিকতে না পেরে ১৭ ডিসেম্বর হানাদারেরা সীতাকুন্ড ছেড়ে যায়। শত্রুমুক্ত হয় সীতাকুন্ড। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে যুদ্ধে নিহত হওয়া মিত্র বাহিনীর লাশ। কয়েক দিন লেগে যায় তাদের সবার দেহ খুঁজে পেতে।

নিহত ভারতীয় সবাইকে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে গজারিয়া দিঘীর পাড়ে দাহ করা হয়। বাঙালি মুসলিমদের বর্তমান উপজেলা কমপ্লেক্সে দাফন করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ জানান, ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নামের ভাস্কর্যটি। এটি গত ২৬ মার্চ উদ্বোধন করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সে আয়োজন পিছিয়ে যায়।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সীতাকুন্ডের সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম।

উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ ও বিভিন্ন স্তরের আওয়ামী লীগ নেতারা।