সীতাকুণ্ডে শুরু শিব চতুর্দশী মেলা

শিব চতুর্দশী মেলা

চট্টগ্রাম : শুরু হয়েছে শিব চতুর্দশী মেলা। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিব চতুর্দশী তিথিতে পূজা উপলক্ষে শুরু হচ্ছে মেলা।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী নয়াবাংলাকে জানান, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় এ উৎসবটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। শিব চতুর্দশী মেলা এবং ২৮ থেকে ২৯ মার্চ দোল পূর্ণিমা মেলা।

এসময় দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী আগমনে সীতাকুণ্ড হয়ে উঠে মুখরিত হয়ে উঠে।

সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সভাপতি সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে এবার মেলায় তীর্থযাত্রীর আগমন কম হতে পারে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিব চর্তুদশী মেলার নিরাপত্তায় রয়েছে সার্বক্ষণিক সি সি টিভি পর্যবেক্ষণ, সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক নিরাপত্তা বলয় ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতা। চিকিৎসা সেবায় রয়েছে বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল টিম ও বিনামূল্যে ঔষুধ সেবাসহ আরও সুবিধার জন্য রয়েছে মেলা কমিটির অস্থায়ী ক্যাম্প।

সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আজ বিকাল ৩টা ১২ মিনিটে শিব চতুদর্শী মেলার চতুদর্শী লাগবে যা শুক্রবার বিকাল ৩টা ৪৬ মিনিটে ছাড়বে। পুন্যার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে পূর্ণ তীর্থ ভূমিতে এসে বাবার দর্শন করার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, প্রায় ৩০০ বছর পূর্ব থেকে সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলার প্রচলন শুরু হয়। এই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

ফাল্গুনী চতুর্দশী তিথিকে ঘিরে আয়োজিত মেলায় প্রতি বছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করছেন প্রশাসন ও মেলা কমিটির সদস্যরা।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম জানিয়েছেন, মেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০০ সদস্য ও ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। মেলার দেড় কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনে ৫টি আন্তঃনগর ও ১টি মেইল ট্রেন তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে যাত্রাবিরতি দিচ্ছে।

সীতাকুণ্ডের সংযুক্ত দুই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বিরুপাক্ষ ও চন্দ্রনাথ মন্দির। চন্দ্রনাথ মন্দির সাড়ে ১২০০ ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে। ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশী বা শিবরাত্রি উপলক্ষে করে প্রতিবছরই এখানে আসেন দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পাহাড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পথে বসে মেলা। প্রথমে পড়বে শংকর মঠ। এর সামনেই ব্যাস কুণ্ড। এখানে এখন দিনভর চলে পুণ্যস্নান ও তর্পন। এটি পার হয়ে পাহাড়ের দিকে উঠতেই রামসীতার মন্দির। সেখানে আছে সীতাকুণ্ড। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভ্রাতৃবধূ সীতাকে রেখে লক্ষ্মণ যে কুণ্ড তৈরি করেছিলেন, এটি সেই কুণ্ড। রামায়ণে বর্ণিত রাম-সীতা ও লক্ষণের ১৪ বছর বনবাস হয়েছিল এখানেই। এছাড়া এখানে আছে শ্মশান, গিরিশ ধর্মশালা, ননী গোপাল তীর্থ মন্দির, ভৈরব ধর্মশালাসহ অনেক মঠ-মন্দির।

সতীর একান্ন পীঠের একটি পিঠও এখানে। পাহাড়ে উঠে প্রথম বিরুপাক্ষ মন্দির। এরপর পূর্বদিকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির। উপবাস থেকে মন্দিরগুলোতে দুধ ও ডাবের জল দিয়ে শিবকে স্নান করাতে আসেন ভক্তরা।