কক্সবাজারে দাফনের ১১দিন পর খালেককে জীবিত উদ্ধার সীতাকুন্ডে

কক্সবাজার : স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খুন হয়েছিলেন আবদুল খালেক। পরিবারের লোকজন মরদেহ শনাক্ত করে আইনি প্রত্রিয়াশেষে দাফনও করা হয়। খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তার স্ত্রী জোবাইদা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন মোবারকা ও ভগ্নিপতি ফারুক কারাগারে রয়েছেন_এমন ঘটনার ১১দিন পর সীতাকুন্ড উজেলার বারআউলিয়া এলাকা থেকে জীবিত খালেককে আটক করেছে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩ মে) এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

পুলিশ জানায়, ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও কলেজ গেট ব্রিজ এলাকার খালপাড় থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধারের দু’দিন পর পরিবারের সদস্যরা খালেককে শনাক্ত করে। পরে তাকে নিয়ে দাফন করা হয়। কিন্তু ঘটনার ১১দিন পর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের একটি দল খালেককে সীতাকুন্ড উপজেলার বার আউলিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেককে আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে খালেক জানায়, স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ১৪ এপ্রিল তিনি সীতাকুন্ড গিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। এরপর ৬-৭ দিন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রাখেন। তাই কক্সবাজারে তাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই তিনি জানতে পারেননি।

কিন্তু দাফনের পরদিন এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে তাকে দাফন করা হয়েছে জেনে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি নিজ থেকে তার ভাই (মৃত খালেক হিসেবে শনাক্তকারী) আবদুল্লাহকে ফোন করলে তিনি চিনেনা বলে ফোন কেটে দেন। এতে হতাশ হয়ে খালেক এলাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাকে আটক করে কক্সবাজার নিয়ে আসে।

এদিকে মৃত খালেককে জীবিত আটক করে আনার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সবাই খালেককে এক নজর দেখতে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিবি অফিসে ভিড় জমায়।

কক্সবাজার ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মানস বড়ুয়া জানান, ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দু’দিনের মাথায় খালেকের পরিবারের লোকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে এসে তাকে খালেক হিসেবে শনাক্ত করে মরদেহ নিয়ে যান। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

‘স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খালেক খুন হয়েছেন সন্দেহ করায় ৫৪ ধারায় খালেকের স্ত্রী জোবাইদা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন মোবারকা ও ভগ্নিপতি ফারুককে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করে ২৩ এপ্রিল আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।’
তিনি বলেন, গত চারদিন আগে খালেকের ব্যবহৃত সিম থেকে একটি ফোনকল আসে ভাই আবদুল্লাহর কাছে। তিনি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বরকে জানালে পরবর্তীতে ডিবিতে এসে নম্বরটি দেন। এর পর ক্লু উদঘাটনে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। প্রযুক্তির মাধ্যমে খালেকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি ট্রেক করা হয়। দাফনের আগে থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমটি সচল করা হয়েছে এবং সরোয়ার নামে এক যুবক তা ব্যবহার করছে। পুলিশ সরোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খালেকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। পরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

পেশায় রাজমিস্ত্রি খালেকরে সঙ্গে সদরের খুরুশকুল তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়ার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে। পারিবারিক মনোমালিন্যে ১৪ এপ্রিল শ্বশুরালয়ে গেলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ১০ কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁও নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি করে মামলা করা হয়।