পাহাড়ী ঢল
খাগড়াছড়ির ব্যবসায়ী ও মৎস্য চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি

অবিরাম বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, পাহাড় ধসের আশংকায় কমেনি আতঙ্ক।

আবারও বর্ষন শুরু হওয়ায় জেলার দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ঈদের ঠিক আগমুহুর্তে এমন পরিস্থিতি খাগড়াছড়িবাসীর ঈদ আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। টানা চারদিনের প্রবল বর্ষনে খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। প্রশাসনের সহযোগিতায় দুর্গতদের নেওয়া হয় আশ্রয়কেন্দ্রে।

সোমবার রাত থেকেই বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা। বুধবার (১৩ জুন) সকালের দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলেও দীঘিনালা, মেরুং ও মাটিরাঙ্গাসহ অনেক উপজেলাই বিদ্যুৎ সরবরাহের বাহিরে রয়েছে।

এদিকে বুধবার সকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানি খাগড়াছড়ি শহরের মুসলিমপাড়া, সবজি বাজার, মেহেদীবাগ, বাস টার্মিনাল, শান্তিনগর, গঞ্জপাড়া, মিলনপুর, মাস্টার পাড়া, শহীদ কাদের সড়ক, অর্পনা চৌধুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেমে গেলেও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। এখনো পানির নীচে তলিয়ে আছে দীঘিনালার মেরুংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ মেরুং বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাহাড় ধস ও সড়কে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক।

দীঘিনালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ও স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারও পরিবার। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহনের কথা নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।

খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজ্বী লিয়াকত আলী চৌধুরী জানান, টানা বর্ষন ও চেঙ্গী নদীর পানিতে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বন্যা ও বৃষ্টির কারনে আসন্ন ঈদ বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, বেচাকেনা নেই বলে­ই চলে।

ফার্নিচার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ শাহ জালাল জানান, পানিতে ভেসে গেছে অনেক কাঠ, নতুন নতুন তৈরিকৃত ফার্নিচার। বন্যার পানিতে ভিজে গিয়ে প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তবে, বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও শত শত পুকুর ও মৎস খামার ও ক্রীকের বাধঁ ভেঙ্গে গিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস চাষীদের মাথায় হাত।

খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য অফিসার একে এম মুখলেছুর রহমান জানান, বিভিন্ন উপজেলার তথ্যমতে আনুমানিক ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সদর উপজেলা মৎস অফিসার শরৎ কুমার ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ি, কমলছড়ি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারনে সদরের ১৮৮টি পুকুর-ক্রীক যার আয়তন ৪৪.৭৫৩ হেক্টর ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫৫ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণসহ সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।