বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের শত্রু। তাদের নেতায় নেতায় চলছে মারামারি, হানাহানি ও কোন্দল। তাই বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের শত্রু।
তিনি বলেন, বিএনপি’র আন্দোলন করার মতো ক্ষমতা নেই। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবলে চলবে না। তা ভাবতে গেলে পরিস্থিতি ৯১-এর নির্বাচনের মতো হবে।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপির দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব থাকলেও জনসমর্থন রয়েছে। তাই ভোটের রাজনীতিতে বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখা যাবে না। এজন্য নির্বাচনে (আওয়ামী লীগ) জয়ী হতে নেতাকর্মীদের সততা ও ভাল আচরণ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে।
আগামী বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের উন্নয়নে ঘাটতি নেই, ঘাটতি আছে নেতাদের আচরণে।
স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আচরণটা শুদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনের দেরি নেই। মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এখন ক্ষমতায় আছেন, কেউ কিছু বলছে না। আচরণ খারাপ হলে মানুষ ব্যালটে শাস্তি দিয়ে দিবে।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন নালিশবাদী দল। প্রত্যেক দিন শুধু নালিশ আর নালিশ। অর্জন নেই, ইতিহাস নেই, আন্দোলন নেই-কিচ্ছু নেই। প্রেস কনফারেন্স করে শুধু মিথ্যাচার করে। আন্দোলনের কথা বলে। কিন্তু বছরের পর বছর শেষ আন্দোলন নেই।
নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, কে কী করেন, সব জানি। আমার নেত্রীও জানেন। দলে গণবিরোধী গডফাদার চাই না। জনপ্রিয় লিডার চাই। কর্মীবান্ধব নেতা হোন। কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। অনুপ্রবেশকারী বসন্তের কোকিলদের দলে ঠাঁই দেবেন না। ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে কমিটি করবেন। নিজের দল ভারি করতে পকেট কমিটি চলবে না। কর্মীদের ত্যাগই এ আওয়ামী লীগ। পরগাছাদের নিয়ে কেউ দল ভারি করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, এমপির ভাগ্নে ও নেতার আত্মীয়রা কমিশন খায়, জমি দখল করে। টেন্ডারবাজি করে। কিন্তু নেতা কিছুই বলেন না। তাদেরকেই সঙ্গে নিয়ে ঘুরেন। এরকম নেতা চায় না আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, আমাদের নেতারা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন না। অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমান। একারণে কাজও করতে পারেন না। সকাল ৬টার মধ্যে নেতাদের ঘুম থেকে জাগার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমি সকালে ঘুম থেকে ওঠে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাইয়ের রুটি খেয়েছি। রাজশাহীর সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি এই শহরের প্রেমে পড়ে গেছি।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, মঞ্চের সামনে বসে থাকা সাধারণ কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা মঞ্চে বসে থাকা নেতাদের নিয়ে। আমরা কর্মীদের ব্যবহার করি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, অনেক নেতা কর্মীদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার পাহারাদার বানায়। কর্মীদের বলি, কারও স্বার্থরক্ষার পাহারাদার হবেন না। তাহলে ভালো নেতা পাবেন না। অপকর্ম করলেও দলে ভালো লোক আসবে না। খারাপ লোক আমাদের দরকার নাই।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু করেন। পরে তিনি সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, ও এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
এছাড়াও আট জেলার এমপি ও দলের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।