মতবিনিময় সভায় চেম্বার সভাপতি
শিল্পের প্রয়োজনে কারিগরিভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম

চট্টগ্রাম : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ও ২০৪১-সহ সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রয়োজনে কারিগরিভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ভিয়েতনাম, কোরিয়া, চীন ইত্যাদি দেশের সাথে পাল্লা দিতে হলে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮০-৮৫% তৈরী পোশাক। এর পরে রয়েছে ঔষধ শিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, বাই-সাইকেল, সিরামিক্স, সেনিটারিওয়্যার ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশে অনেকগুলো অতীব সম্ভাবনাময় সেক্টর রয়েছে যা যথাযথ কারিগরি উন্নয়ন ও নীতি সহায়তা পেলে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সোমবার (১ অক্টোবর) সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জব (ইসিফোরজে) প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত টেকনোলজি সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র যৌথ আয়োজনে “এ স্টেকহোল্ডার কনসাল্টেশন মিটিং অন দ্যা প্রপোজড টেকনোলজি সেন্টার (টিসি) টু বি ইস্টাবলিশড এ্যাট মিরসরাই ইকনোমিক জোন ইন চিটাগাং” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন চেম্বার সভাপতি।

চেম্বার সভাপতি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় তা সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আরও স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও (অতিরিক্ত সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক (ইসিফোরজে) মোঃ ওবায়দুল আজম, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ ও ওমর হাজ্জাজ, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিস হোসনা ফেরদৌস সুমি, বেজা ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কনসালটেন্ট মৃনাল কান্তি সরকার, প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ লৎফুর রহমান, ইপিবি’র পরিচালক কংকন চাকমা, বিসিক প্রমোশন কর্মকর্তা তানিজা জাহান, প্রান্তিক গ্রুপের এমডি ইঞ্জি. গোলাম সরওয়ার, লুব-রেফ’র পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, ওসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরী লিঃ এমডি ইঞ্জি. সুদীপ মজুমদার, ইউনিভার্সাল রাবার মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ মোঃ মঞ্জুর খান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মনির আহম্মদসহ চামড়া ও চামড়াজাত, ফুটওয়্যার, প্লাষ্টিক ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীগণ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ কামাল মোস্তফা চৌধুরী, মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও মোঃ আবদুল মান্নান সোহেল, বিজিএপিএমইএ’র পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম, মেটাবিল্ড লেঃ (অবঃ) নিঝুম ইসলাম নিশি, এনার্জিপ্যাক’র ইঞ্জি. আবদুল খালেক, বিএসআরএম মোঃ নুরুল হকসহ সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ টেকনোলজি সেন্টার স্থাপন ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ওবায়দুল আজম বলেন-সরকার প্লাষ্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণ, দক্ষ জনবল তৈরী এবং কারিগরি উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ইসিফোরজে প্রকল্পের মাধ্যমে মিরসরাই ইকনোমিক জোনে ১০ (দশ) একর জায়গায় একটি টেকনোলজি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উল্লেখিত সেক্টরগুলোর সম্প্রসারণে কি কি ধরণের সেবা ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন তা জানার লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সাথে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মোঃ ওবায়দুল আজম টিসি’র মাধ্যমে এক্সপোর্ট সাপোর্ট স্ট্রাকচার তৈরী করা হবে জানিয়ে উদ্যোক্তারা রপ্তানির সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই সেন্টার পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি জানান। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিস হোসনা ফেরদৌস সুমি বলেন-দেশে উন্নতমানের পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পণ্যের মানোন্নয়ন অপরিহার্য। তিনি পণ্যের উৎপাদনে নতুন নতুন কারিগরি প্রযুক্তির সংযোজন, আন্তর্জাতিক বাজার সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ, ব্র্যান্ডিং, প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা এই টেকনোলজি সেন্টার থেকে প্রদান করা হবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন-রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা বাড়ানো এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

অন্যান্য বক্তারা মান নির্ণয় ও প্রত্যয়নকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন, চট্টগ্রাম শহরে সেবা প্রদানের জন্য অফিস স্থাপন, কেমিক্যাল কম্পোজিশন টেস্ট, মেটাল ল্যাব টেস্ট, হিট ম্যানেজমেন্ট, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, উন্নতমানের ডাইজ ডিজাইন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, টেস্টিং ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৯৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে যেখানে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। বাকী অর্থায়ন করবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

শেয়ার করুন