মালিক-কন্যার গায়ে হলুদে দেড় হাজার পোশাককন্যা

আজ কোন কাজ নয়, আজ প্রীতির গায়ে হলুদ।

চট্টগ্রাম : মালিক শ্রমিকের আরো একটি দেয়াল ভেঙ্গে দিলেন চট্টগ্রামের শিল্পপতি এস এম আবু তৈয়ব। নিজের মেয়ে প্রীতির গায়ে হলুদে ব্যতিক্রমী আয়োজনে মেতে উঠলেন এ ব্যবসায়ী নেতা। তার কারখানার অন্তত দেড় হাজার কর্মীকে উপহার দিলেন একই ধরনের শাড়ি-পাঞ্জাবি। কারখানা ছাদেই হয়েছিল গায়ে হলুদের পুরো আয়োজন। গার্মেন্টস কন্যারা নাচের তালে তালে গাইলেন ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’, ‘লীলাবালি লীলাবালি…সাজাইবো তোরে’। এখানেই শেষ নয়। একই রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবী পরে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব ও তার স্ত্রী উলফাতুন্নেছা পুতুল। বাদ যাননি স্বজনরাও। কারখানার কর্মকর্তাদের পরনেও ছিল একই রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবী। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনাও করেন গার্মেন্টস কর্মীরা। নববধূকে উপহার দিতেও ভুলেননি তারা। সকলে মিলে প্রায় লাখ দেড়েক টাকায় কেনা অলংকার নিজ হাতে পরিয়ে দিলেন নববধূকে। এমন বিরল আয়োজনের গন্ধ যখন বাতাসে ছড়িয়ে পরে তখন গণমাধ্যম কর্মীরাও নাক চেপে বসে থাকেননি। খবরের গুরুত্ব বিবেচনায় চড়িয়েছেন অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়।

আরো পড়ুন : চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি, ৫ জানুয়ারির পর শৈত্যপ্রবাহ

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টসের মালিক এসএম আবু তৈয়ব। তিনি একাধারে খ্যাতনামা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি। তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি। ঢাকার বারিধারার আসলাম মোল্লা ও রুবিনা মোল্লার পুত্র শফিউল ইসলাম মোল্লার (নিলয়) সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছেন প্রীতি।

আজ কোন কাজ নয়, আজ প্রীতির গায়ে হলুদ।

চট্টগ্রাম ক্লাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেই বাবুর্চি রান্না করবেন, তাকে দিয়েই একই মেন্যুর রান্না পরিবেশিত হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টস কারখানার একাধিক কর্মী জানান, গায়েহলুদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কারখানার সব শাখায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। গার্মেন্টসের ছাদের ওপর মঞ্চ করে আয়োজন করা হয় মালিককন্যার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। পুরো ছাদ জুড়ে ছিলেন শত শত নারী। তারা সবাই ওই গার্মেন্টসের নারী কর্মী। সবার পরনে ছিল একই শাড়ি।

সবকিছু ছাপিয়ে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রীতি। গার্মেন্টস কন্যারা কেউ পঞ্চাশ টাকা, কেউ বিশ টাকা, কেউবা একশ টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রীতিকে চমৎকার এক সেট স্বর্ণের গহনা উপহার দিয়েছেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা সেই গহনা গার্মেন্টস কন্যারাই পরিয়ে দিয়েছেন মালিককন্যার গায়ে।

আজ কোন কাজ নয়, আজ প্রীতির গায়ে হলুদ।

নিজের একমাত্র কন্যার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান গার্মেন্টসের ছাদে গার্মেন্টস কন্যাদের দিয়ে করানোর এই বিরল আয়োজনের ব্যাপারে এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘এটা প্রচারের জন্য নয়। গার্মেন্টস কারখানার এই খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে আমার জন্য, আমার কন্যার জন্য, পুরো পরিবারের জন্য। এরাইতো রক্ত ঘাম দিয়ে আমাকে এই অবস্থানে এনেছেন। আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি।’

শেয়ার করুন