লাশের মিছিল রাঙ্গামাটিতে, আসছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
চট্টগ্রামে পাহাড় ধস : সেনা সদস্যসহ ১৩২ জন নিহত

দুইদিনের টানা বর্ষণে তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১৩২ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শত শত বাড়ি-ঘর ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে সড়ক, বাড়ি-ঘর। মারা গেছে গবাদি পশু। ক্ষেতের সফল পানির নিচে। বহু পরিবার খোলা আকাশের নীচে। দূর্গত এলাকায় পানিতে ভাসা মানুষ ভুগছে তীব্র পানীয় জলের সংকটে।

আমাদের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি চৌধুরী হারুন রশিদ জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটিতে সেনা সদস্যসহ ৯৮জন নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় দুইশতাধিক। বহু বাড়ি-ঘর ধংসস্তুপে পরিণত। বিদ্যুৎ এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেনা প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আজ (বুধবার) সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙ্গামাটি পরিদর্শন করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

রাঙ্গামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, মানিকছড়ি এলাকায় মারা গেছেন চার সেনা সদস্য। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানভীরের মরদেহ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে এসেছে। এ ছাড়া আরও তিন সেনাসদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান মানিকছড়ির ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত সেনা সদস্যরা হলেন মানিকগঞ্জের সিংড়া উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদিঘীর সৈনিক মো. শাহিন আলম।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলার সময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পাহাড়ধসে কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮ জন মারা গেছেন।  বলে জানিয়েছেন কাউখালীর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কমল বরণ সাহা। তবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি তারা।

এদিকে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন। এছাড়া বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড়ধসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল বগাবিল এলাকায় ২০ জন, চন্দনাইশের ধোপাছড়ি এলাকায় ছয়জন ও বাঁশখালীতে একজন নিহত হয়েছেন। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে মারা গেছেন ছয়জন।

এছাড়া ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে হানিফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এসব তথ্য জানিয়েছে।

মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ।

নিহতরা হলেন- লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪); আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তার মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)।

শেয়ার করুন