খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী
শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ের আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

শংকর চৌধুরী, খাগড়াছড়ি: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ডিকশনারীতে পশ্চাদপদ বলতে কোন শব্দ নেই। শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাহাড়, হাওড়-বাওর ও নদী ভাঙন এলাকায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। পার্বত্যাঞ্চলের উপর শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি রয়েছে বলেই এই সরকারের আমলে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মানে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছে।

এখন প্রতিটি উপজেলায় একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এটা শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যেরই অংশ। খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণ করে বলেন, সেদিন তাঁরা এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলেই এ বিদ্যাপীঠ থেকে অনেক জিনিয়াস আজ দেশে-বিদেশে আলো ছড়াচ্ছে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় খাগড়াছড়ির প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী উৎসবে বর্ণাঢ্য র্যালী

এসময় শিক্ষামন্ত্রী খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ বছর লক্ষ্যমাত্রা রেখে একটি একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করে প্রথম ধাপে চার তলা বিল্ডিং নির্মাণের ঘোষণা দেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে ল্যাবরেটরী, মাল্টিমিডিয়া সহ সকল কার্যক্রম চালু করনে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। এছাড়াও তিনি খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের ঘোষনা দিয়ে, দেশ ও শিক্ষার উন্নয়নে আবারো শেখ হাসিনার সরকারকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় রায় দিতে উদার্থ আহবান জানান।

পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. সুধীন কুমার চাকমা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

‘আর একটি বার আয়রে সখা, প্রানের মাঝে আয়’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বিদেশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের প্রিয় প্রাঙনের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবে যোগ দিয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি সদর জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল জি এম সোহাগ, পুলিশ সুপার মো: আলী আহমেদ খান এবং প্রবীন শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এসময় বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো: রফিকুল আলম এবং খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির সচিব শ্রীলা তালুকদার প্রমুখ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-১ম স্থান পাবে, এটি গতানুগতিক। গতানুগতিক ধারায় সকল শিক্ষার্থী ডাক্তার হতে চায়। সকল শিক্ষার্থী যদি ডাক্তারই হয়, তাহলে রোগী হবে কারা। শিক্ষার এ ধারায় একটি দেশ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রযুক্তির ওপর দক্ষতা অর্জন ও নৈতিক মুল্যবোধ সম্পন্ন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে আধুনিক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। যা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষে শিক্ষাখাতে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্য বাংলাদেশকে একটি উন্নত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সরকার দুই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছে। যা বিশ্বের আর কোনো দেশে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে একসঙ্গে এতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয় না। নতুন প্রজন্ম মেধার দিক দিয়ে এখন আর দরিদ্র নয়। আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য আধুনিক ও যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার মাধ্যম দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

শান্তিচুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহড়ের দু’দশকের বেশি সময় রক্তক্ষয়ী সমস্যার সমাধান এনেছেন। যা বিশ্বনন্দিত একটি মহৎ কাজ। শুধু তাই নহে, শান্তিচুক্তির পর পরই পাহাড়ের স¤প্রীতি ও শান্তি সহাবস্থান অটুটু রাখতে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পাহাড়ের আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ১৯ হাজার নতুনভাবে শিক্ষার প্রসারে চারতলা বিল্ডিং নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গৌরবোজ্জল অধ্যায় এমন মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আর সে অধ্যায়ের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পাহাড়ে অবারিত উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে পাহাড়ের দৃশ্যপট বদলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি বদলে গেছে, যা দেখি নতুন লাগে’।

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে তিন পার্বত্য জেলার মতো খাগড়াছড়িতেও সব সেক্টরে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। এই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অগ্রণী ভূমিকার বিকল্প নেই।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসময় খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির সচিব শ্রীলা তালুকদার তাকে স্বাগত জানান। এসময় তিনি উৎসবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন ও সেলফি তোলেন।

উল্লে­খ্য, পাহাড়ের ব্যাতিক্রমী এ যাবতকালের সবচেয়ে বৃহৎ এ উৎসবকে ঘিরে ‘উৎসবের রঙে রঙিন খাগড়াছড়ি’। পাহাড়ের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। এ উৎসব পাহাড়ে সম্প্রীতির নতুন ডানা মেলবে বলে মন্তব্য উৎসবে অংশগ্রহণকারী আলোকিতদের।