জীববৈচিত্র্য চরম হুমকিতে
হালদায় তিন মাসে ১৪ মৃত ডলফিন

আসলাম পারভেজ : এশিয়ার বিখ্যাত একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই নদীতে সাম্প্রতিক সময়ে মারা যাচ্ছে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন।

২০১৭ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা গচ্ছাখালি কালের মাষ্টার বাড়ির কালবার্টের নিচ থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করে উপজেলা মৎস্য অফিসের কার্যালয়ের লোকজন। এরপর গত ৩ জানুয়ারী গড়দুয়ারা স্লুইস গেইট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় আরো একটি মৃত ডলফিন। বিগত ৩ মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক ১৪টি ডলফিনের মৃত উদ্ধার করা হয়েছে। এই ডলফিনগুলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ্যারভেশন অব ন্যাচারের (আই.ইউ.সি.এস) লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আজহারুল ইসলাম।

মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক দিন পূর্বে উদ্ধার করা ডলফিন গুলো প্রায় ৬ফুট লম্বা। ওজন আনুমানিক ১০০ কেজি। এর পূর্বে যে ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে তার ওজন প্রায় ২মণের কাছাকাছি। উদ্ধার করা দুটি ডলফিনকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। গত তিন মাসে হালদার মিষ্টি পানিতে প্রায় ১৪টি ডলফিন মৃত অবস্থায় ভেসে উঠে। কি কারণে এই সব ডলফিন গুলো মারা হচ্ছে তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারছেনা। তবে যান্ত্রিক বড় বড় নৌযান চলাচল ও দখল দূষণ ড্রেজার মেশিন ব্যবহার ও প্রপেলারে আঘাতে ডলফিন গুলো মারা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

হালদা বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলফিন গুলো বিপন্ন প্রজাতির জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। এইগুলো মিঠাপানির ডলফিন। সারা বিশ্বে এ প্রজাতির ডলফিন ১০০০-১১০০টি আছে। হালদা নদীতে আছে ৩০০-৩৫০টি ডলফিন। যে গুলো নানা কারণে বিপদ সংকুল। হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো অর্ডিনেটরের দায়িত্ব থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ মনজুরুল কিবরিয়া এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদককে জানান বালু তোলার ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকার প্রপেলারের সাথে লেগে আঘাতের কারণে ডলফিন গুলোর মৃত্যু হতে পারে। যার প্রমাণ ভেসে উঠা ডলফিন গুলোর শরীরে আঘাতের দাগ দেখা দেয়।

তিনি আরো বলেন, নদী দখল ও দূষণের পাশাপাশি র্দীঘ কয়েক বছর ধরে হালদা নদী থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। বালু পরিবহনে যন্ত্র চালিত বড় বড় বোট গুলো আইন অমান্য করে চলাচল করতে থাকে। এতে করে ডলফিনের পাশাপাশি বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ মাছও ক্ষতি হচ্ছে। ফলে এটি মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের জন্য একটি অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষসহ হালদা বিশেষজ্ঞরা। হালদার জীববৈচিত্র্য যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা প্রয়োজন। সকল প্রকার যান্ত্রিক নৌযানসহ নানান দূষণ থেকে হালদা নদীকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে অপূরনীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাটি চেপে রাখা মৃত ডলফিনগুলোর কঙ্কাল সংরক্ষণ করে গবেষনা করা হবে বলে হালদা বিশেষজ্ঞ ডঃ মনজুরুল কিবরিয়া জানান।