ইয়াবা বাণিজ্য থামছে না জিসান ও শাহ আলমদের

সিন্ডিকেট সদস্য জিসান

কক্সবাজার : জেলার টেকনাফ উপজেলার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটক করতে প্রশাসন সম্ভাব্য স্থান গুলোতে হানা দিচ্ছে প্রতিদিন। তবে গভীর জলের মাছ কিছু মাদক ব্যবসায়ী গোপনে হোন্ডির টাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। তাদেরই একজন জিসান। শুধু জিসান নয়, তার পুরো পরিবার নিয়ে রয়েছে একটি বড় সিন্ডিকেট। কোনমতেই থামছে না তাদের ইয়াবা বাণিজ্য। বিভিন্ন সময় ইয়াবা ডন জিসান ও দুই ভগ্নিপতি তাহের এবং আব্দুল্লাহ আইনের আওতায় আসলেও হোন্ডি ব্যবসায়ী শাহ আলম রয়ে গেছে নাগালের বাহিরে। তবে প্রশাসনের দাবী, চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সম্পত্তিও জব্দ করা হতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেইলপাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের পুত্র শাহ আলমের ভগ্নিপতি তাহের শুরুর দিকে স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ডিপ ফ্রিজ (পায়ুপথে) ইয়াবা চালান পাচারের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের দিকে ইয়াবার লাল দুনিয়ায় প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে ২০১২ সালের দিকে ইয়াবা সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হন। কিছুদিন পর আইনের ফাঁক গলে বেড়িয়ে আসে। পরবর্তিতে তার হাত ধরে শ্যালক জিসান ইয়াবা জগতে প্রবেশ করে। ২০১৩ সালের দিকে ভগ্নিপতি আব্দুল্লাহ সহ কক্সবাজার থেকে ইয়াবাসহ আটক হয়ে দীর্ঘ দিন হাজত বাস করে। জেল থেকে বেড়িয়ে প্রবাসী শাহ আলমের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে।

কে এই শাহ আলম?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৭ বছর আগেও বেকার যুবক হিসেবে পরিচিত ছিলো এই শাহ আলম। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশ পাড়ি জমালেও শুরুর দিকে আর্থিক ভাবে তেমনে কোন সচ্ছলতা আসেনি। কিন্তু মাত্র ৫/৭ বছরে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যান তিনি। টেকনাফ ডেইল পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫ কোটি টাকা মূল্যের নামে বেনামে সম্পত্তি, কক্সবাজার নুনিয়ার ছড়ায় নির্মাণাধীন দালানসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি।

এবিষয়ে শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে ইয়াবা এবং হুন্ডির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে কোটি কোটি টাকা কোন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনাহয়েছে তার কোন উত্তর দিতে পারেনি।

প্রতিবেশীদেরদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, তার ভাই জিসানের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করে দুবাই বসে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো।সে ব্যবসায় স্থানীয় ভাবে তার ভাই জিসান ভগ্নিপতি তাহের, আব্দুল্লাহ তিনজন মিলে এলাকার বেকার যুবক ও রোহিঙ্গা নারীদের ব্যবহার করে ঢাকা চট্টগ্রাম ইয়াবা পাচার করে আসছিলো। গতবছর শাহ আলমের আপন মামা কবির আহমদ জিসান ও শাহ আলমের ইয়াবার চালান নিয়ে কক্সবাজার থেকে আটক হয়ে বর্তমান কারাগারে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে জিসান ইয়াবা বিক্রির সিংহ ভাগ টাকা বিভিন্ন কৌশলে দুবাই পাচার করতো। আবার সেই টাকা শাহ আলম দুবাই থেকে প্রবাসী রিয়াজ উদ্দীন নামের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতো। এভাবে চক্রটি দ্বীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এব্যাপারে জিসানের সাথে আলাপ করতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর লাইন কেটে দিলে ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বাবু রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই দাবী করে বলেন, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাছাড়া আত্মগোপনে থাকার কারণে এদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভুক্তভোগী মহলের মতে, ইয়াবা ব্যবসা রোধে এসব চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মিশন বাস্তবায়ন কিছুতেই সম্ভব না। তাই স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।