হত্যার পর স্বামীর লাশ ওয়ারড্রোবে রেখে স্ত্রী চাকুরিতে

স্ত্রী জীবন্নাহার

গাজীপুর : স্বামী রফিকুল ইসলাম এবং স্ত্রী জীবন্নাহার। উভয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিক। স্ত্রীর বেতন-বিরোধের জের ধরে ইট দিয়ে প্রথমে স্বামীর মাথায় আঘাত করেন স্ত্রী। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ঘরের ওয়্যারড্রোবে লুকিয়ে রেখে চাকুরিতে যান তিনি। ছুটিশেষে কারখানা থেকে বাসায় ফিরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বটি দিয়ে স্বামীর হাত, পা ও মাথা কেটে ছয় টুকরো করেন। এক পর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে মাথা ও হাত ময়লার ড্রামে, শরীর বস্তার ভেতর এবং পা টয়লেটের পাশে ফেলে দেন।

আরো পড়ুন : অনন্তকালের পথে চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা নুরুল আলম চৌধুরী

স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার শ্রীপুর পুলিশ ছয় টুকরো বস্তাবন্দি লাশ ছাড়াও তার মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ উদ্ধার করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের স্ত্রী জীবন্নাহারকেও গ্রেপ্তার করে। মারিয়া আক্তার রোজা নামে চার বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে ওই সংসারে।

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং করে এসব তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। সাংবাদিকদের সামনে স্বামীকে হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন জীবন্নাহার।

সংসারের অভাব ঘোচাতে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রী জীবন্নাহারও চাকরি নেন একটি কম্পোজিট কারখানায়। মাস শেষে পাওয়া বেতন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো স্ত্রীর। বেশ কিছুদিন ধরেই বেতন নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা মাথায় আসে স্ত্রী জীবন্নাহারের। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামীকে হত্যার পর শরীর থেকে মাথা আলাদা করে লাশ করেন ছয় টুকরো। পরে এসব টুকরো বস্তাবন্দি করে ফেলে দেন বাড়ির পাশের একটি বাঁশঝাড়ে।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জীবন্নাহার জানায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের উলামাকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। আড়াই বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকায় স্থানীয় আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন রফিকুল। রফিকুল ‘হাউ আর ইউ’ কারখানায় এবং জীবন্নাহার নিট কম্পোজিট কারখানায় কাজ করতেন।

পুলিশের দাবি, হত্যার আলামত ও লাশ গুমের জন্য বটি দিয়ে স্বামীকে ছয় টুকরো করেন জীবন্নাহার।

এসপি শামসুন্নাহার জানান, স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকালে ওই শ্রমিকের ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় জীবন্নাহারকে। হত্যার ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। ঘটনার পর নিহতের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।