জঙ্গি হামলা : হলি আর্টিজান থেকে আতিয়া মহল
ছয় পুলিশের প্রাণ উৎসর্গ

রাজধানীর হলি আর্টিজান থেকে আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানা পর্যন্ত ছয় পুলিশ সদস্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বাহিনীর দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানান দিয়েছেন-দেশবাসির জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা জীবন দিতেও ভয় পান না। তবে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অসতর্কতার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে দাবী করে আইন-শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন-‘জঙ্গিরা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে-তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা সময়ের ব্যাপারমাত্র।’

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে কনস্টেবল জহুরুল হক ও আনসারুল ইসলামকে। সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহল জঙ্গি আস্তানায় জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম এবং কোর্ট ইনস্পেক্টর চৌধুরী আবু কায়সার। ছয় পুলিশ সদস্য জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে দেশবাসির জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলেছেন আইনশৃংখলা বাহিনী।

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আর্টিজান হামলাকারীদের সন্দেহভাজন প্রশিক্ষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ধরতে গিয়েও রক্তাক্ত হন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ শহীদ আলম ও পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির।

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক বা ডিআইজি (ক্রাইম) হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন-‘মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার শপথ নিয়েই আমরা বাহিনীতে যোগ দিয়েছি। এই দায়িত্ব আমাদের বাহিনীর সবার। আমরা অতীতে যেমন এই কাজ করেছি, বর্তমানে করছি, ভবিষ্যতেও করব। জীবন দিয়ে হলেও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব আমরা।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে যাওয়া মানুষদের জিম্মি করার খবর পেয়ে প্রস্তুতি ছাড়াই ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান। ফলে অতর্কিতই জঙ্গিদের গুলি আর গ্রেনেড ঝাঁঝরা করে দেয় তাদের বুক।মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তারা। অন্য সহকর্মীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ততক্ষণে জঙ্গির ছোঁড়া গ্রেনেড কেড়ে নেয় তাদের প্রাণ।

ওই বিয়োগ-ব্যথার রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় প্রাণ উৎসর্গ করেন দুই পুলিশ সদস্য। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে নাশকতা করতে ঢুকার চেষ্টা করছিল দুই জঙ্গি। কিন্তু তল্লাশি চৌকিতে আটকে দেয়া হয় তাদের। সেখানেই অতর্কিত হামলা হয় পুলিশের ওপর। কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় কনস্টেবল জহুরুল হক ও আনসারুল ইসলামকে। ওই ঘটনায় আহত হন আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এভাবেই পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশবাসির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলেছেন আইনশৃংখলা বানিহী।

এসব অভিজ্ঞতার পর পুলিশ আগের চেয়ে বেশ সতর্ক। অভিযানের আগে প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে ভালো। এ কারণে মিরপুরের কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, রাজধানীর আজিমপুর, আশকোনা, গাজীপুরের লেবুবাগান, পাতারটেক, টাঙ্গাইলের বসুন্ধরারটেক, আশকোনার বসুন্ধরারটেক, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড আস্তানায় অভিযানে পুলিশের কেউ আহত হননি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস জানান, ‘হলি আর্টিজানে হামলাটা হয়েছে অতর্কিত। এটা আমাদের কল্পনায়ও ছিল না। প্রস্তুতিও ছিল না। তবে শোলাকিয়া ও সিলেটে যেটা ঘটেছে সেটা নিছক দুর্ঘটনা। এর বেশি কিছু নয়।’

তবে এবার রক্তাক্ত সিলেটের শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’। বহুতল বাড়িতে জঙ্গি আছে-এমন সংবাদ পেয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে শুক্রবার রাতে। তবে আস্তানায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের যে শক্তিমত্তার পরিচয় তারা পেয়েছে, তাতে নিজেরা অভিযানে না গিয়ে কৌশলী অভিযানে যোগ দিয়েছে সেনা কমান্ডো সাঁযোয়া যান।

ওই বাড়িতে অভিযান চলাকালে সেখান থেকে অদূরে জনবহুল একটি এলাকায় অতর্কিত জঙ্গি হামলা হয়। হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ছয়জনের প্রাণ, তাদের দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। তারা হলেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম। এবং কোর্ট ইনস্পেক্টর চৌধুরী আবু কায়সার।

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (অপরাধ) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জঙ্গিরা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’

শেয়ার করুন