হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরীকে গণসংবর্ধনা

হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরীকে গণসংবর্ধনা

চট্টগ্রাম : ফটিকছড়ি নাজিরহাট তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নাজিরহাট বাজার কেন্দ্রীয় জামে সংলগ্নে হেফাজতে ইসলামের আমীর নির্বাচিত হওয়ায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।

দেশের অরাজনৈতিক সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর নির্বাচিত হওয়াই তিনি বৃহত্তর ফটিকছড়ি কৃতি সন্তান হিসেবে তাকে সংবর্ধনা জানাতে সমগ্র ফটিকছড়ি থেকে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জমায়েত হন।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) ফটিকছড়ি নাজিরহাট বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্নে ফটিকছড়ি তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিকাল ৩টায় বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক ও হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমী এর সভাপতিত্বে এবং মুফতি আবু মাকনুন বাবুনগরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রধান উপদেষ্টা ও বাবুনগর মাদরাসা মোহতামিম আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসলাম ও নবীর আদর্শ বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্য হেফাজতে ইসলাম কাজ করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে আমাদের কোনো অবস্থান নেয়। সরকার নিজ অবস্থান থেকে দেশ পরিচালনা করবে এতে আমাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তবে আমাদের অবস্থান নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে। যারা ইসলাম ধর্ম এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবি (সাঃ) বিরুদ্ধে কটাক্ষ করবে তাদের বিরুদ্ধে। এসব নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি তাঁর বক্তব্যে কঠোর হুশিয়ারি দেন।

সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে মদীনার সনদে দেশ চলবে। এই বক্তব্যের পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, মদিনা সনদে দেশ পরিচালনা করার জন্য আমরা কাজ করছি।এক্ষেত্রে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে তিনি ঘোষণা দেন।

আমীরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার কঠোর দাবী জানিয়ে আরো বলেন, অন্যান্য ভিন্ন ধর্মের লোকের মতো কাদিয়ানীরা এদেশে বাস করতে পারবে। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে তারা যাতে দেশে বসবাস করতে না পারে সেজন্যে এদের অমুসলিম ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

মহানবী সা. কে নিয়ে কটূক্তি করার কারনে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইতিহাসে এই প্রথম রাষ্ট্রীয় মদদে আমাদের নবীর বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে নবীর শানে বেয়াদবি করেছে। ফ্রান্সর প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্রোকে এই যুগের নব্য ফেরাউন বলে তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এই দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন থাকলেও সকল ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে তারা একাকার হয়ে যায়। তাদের দু’দলের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। সুতরাং এই দুই রাজনৈতিক দল একে অপরের ভাই-ভাই।

হেফাজতে ইসলামের সাথে এই দুই দলের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তিনি আরোও বলেন, আমরা সরকার দলীয় কিংবা সরকার বিরোধী নয়। শুধুমাত্র আমরা এদেশে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থা নিশ্চিত করে এদেশে ইসলাম রক্ষা ও নবী (সাঃ) এর ইজ্জত, সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে হেফাজতে ইসলাম কাজ করে যাবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, আল্লামা হারুণ আজিজ নদভী, আল্লামা হাবিবুল্লাহ নদবী, আল্লামা জুনায়েদ বিন জালাল, মাওলানা মুফতি খালেদ, মুফতি শওকত, মাওলামা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ ধর্মপুরী, হাফেজ মাওলানা ইয়াহ প্রমূখ।

বক্তব্যের শেষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর হিসেবে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মনোনীত হওয়ায় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিরাপত্তার নিশ্চিতকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল।