
কক্সবাজার : তারা চারজনই পূর্বপরিচিত। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায় মমিনুল। অপর তিন বন্ধু পরিকল্পনা করে তার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ মে মাগরিবের নামাজের পর আবদুল্লাহ, কায়সার ও আবদুর রহিম মিলে একটি চা দোকানে একত্রিত হয়। একটি বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে ওই দিন রাতে সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল চালক মমিনুলকে মোটরসাইকেল নিয়ে ফাইতং এলাকার নোনাছড়ি সুইচ গেইট এলাকায় আসতে বলে। পরে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বড়ইতলী টু চিউবতলী রোডে অলিকাটা নামক স্থানে পৌঁছায়।
এরপর আব্দুর রহিম প্রস্রাব করার জন্য মমিনুলকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে। মমিনুল মোটরসাইকেল থামালে আব্দুর রহিম প্রস্রাব করে এসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজন মিলে ভিকটিম মমিনুলকে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিছড়ে গলা চেপে ধরে রাস্তার পাশে মাটিতে শোয়াইয়া ফেলে এবং নৃশংসতম হত্যার উদ্দেশ্যে চাকু দিয়ে বারংবার ভিকটিমের গলায় পোচ দিতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে অন্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে জখম করতে থাকে। তারপরও মৃত্যু নিশ্চিত হলে নিকটস্থ পাহাড় থেকে ভিকটিমকে ছুড়ে ফেলে দেয়।
আরো পড়ুন : মিরসরাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও মিছিল
আরো পড়ুন : পঁচা-বাসি খাবার সরবরাহ : প্যারাগনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
এমন নৃশংসভাবে খুনের মূল আসামীকে নগরীর বাকলিয়া থেকে আটক করেছে র্যাব-১৫। আটক আব্দুল্লাহ (১৬) চকরিয়া হারবাং নোনাছড়ি এলাকার আব্দুর রশিদ ও নূর জাহান বেগমের ছেলে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক আব্দুল্লাহ এভাবেই পুরো ঘটনার বর্ণনা করেন।
মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত ৮টায় চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
বর্বরোচিত এই অপরাধ সংঘটনের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনপূর্বক অপরাধের সাথে জড়িত প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।
নিহত মোটর সাইকেল চালক মমিনুল ইসলাম (১৬) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বড়ইতলী এলাকার মাইজপাড়ার বাসিন্দা নূরুল আলমের ছেলে। ২১ মে শুক্রবার দুপুরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।
বুধবার (২৬ মে) দুপুরে র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া এন্ড অপারেশনস্ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
র্যাব জানায়, গত ২১ মে লামা থানার ফাইতং ইউনিয়নের অলিকাটা নামক স্থানে পাহাড়ের ঢালে স্থানীয় সাবেক আবু মেম্বারের লেবুর বাগানের পাশে অর্ধগলিত লাশের সন্ধান মিলে। কিন্তু কে বা কারা এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে তা সবার অজানা।
পরবর্তীতে জানা যায় অর্ধগলিত লাশটি চকরিয়ার বড়ইতলী এলাকার মমিনুল ইসলামের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, হত্যাকান্ডটি লাশ উদ্ধারের আনুমানিক ৪ দিন পূর্বে সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এমতাবস্থায় মামলাটি তদন্তের জন্য কোন ধরণের সূত্রই পাওয়া যাচ্ছিলনা। কিন্তু র্যাব-১৫ এর চৌকস আভিযানিক দলটি ওই হত্যাকন্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫ দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামী আব্দুল্লাহকে ২৫ মে রাত ৮টায় চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে আটক করে।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে আটক আব্দুল্লাহ তথ্য দেয় যে, সে তার সহযোগী কক্সবাজারের চকরিয়া থানার নোনাছড়ি এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে কায়সার(১৮), একই এলাকার ইলিয়াছের ছেলে আব্দুর রহিম (১৮) কে সাথে নিয়ে মুবিনকে হত্যা করে।
আটককৃত আসামী আব্দুল্লাহকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান জেলার লামা থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীণ। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, র্যাব-১৫ থেকে আসামী হস্তান্তর করা হলে আমরা পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।