শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের মৃত্যু; শোকে মুহ্যমান চট্টগ্রাম

প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন মারা গেছেন। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি।

আগামী বুধবার (২ মার্চ) সকালে থাইল্যান্ড থেকে তার মরদেহ দেশে আনা হবে। এদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় চট্টগ্রাম ইপিজেডে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদে জোহর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সীতাকুণ্ডের উপজেলার সলিমপুরে বাদে আছর নিজ বাড়িতে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শিল্পপতি নাসির উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএর নেতৃবৃন্দ জানান, নাছির উদ্দিনের মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।

নাসির উদ্দিন ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ছলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল জলিল এবং মাতা আমেনা খাতুন। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত সাহসী এবং অনুসন্ধিৎসু ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। তিনি ১৯৬৮ সালে লেখাপড়ার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসার সাথে যুক্ত হন।

নাছির উদ্দিন ১৯৮৩ সালে পদার্পণ করেন পোশাকশিল্পে। যাত্রা শুরু হয় এনজেডএন গার্মেন্টস লিমিটেড দিয়ে। আশির দশকে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের কাছে পরিচিত ছিল দুর্ভিক্ষ এবং বন্যাকবলিত গরীব দেশ হিসেবে। সেসময় অদম্য সাহস নিয়ে নাছির উদ্দিন উন্নত দেশগুলোতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হন। বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন পোশাকশিল্পের এক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে। একে একে বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে থাকে উন্নতবিশ্বের সকল পোশাক ক্রেতারা। তাঁর এ উদ্যোমে উৎসাহিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আরও অনেক পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (CEPZ) প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড’। পোশাকশিল্পের গতানুগতিক ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রবর্তন করেন বাংলাদেশে। ২০০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জিন্স ২০০০ লিমিটেড এবং ২০০৮ সালে শুরু করেন ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড নামের রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপে কর্মরত আছে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্যাসিফিক জিন্সের পণ্য। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক হিসেবে প্যাসিফিক জিন্স এর পরপর সাতবার জাতীয় রপ্তানী ট্রফি অর্জন করেছে।

নয়াবাংলা/এইচএম

শেয়ার করুন