বান্দরবানের রামথুই পাড়া স.প্র.বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ব্যাপক অনিয়ম ॥ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এতে প্রাইমারীর গন্ডি পার হওয়ার আগেই ঝরে পড়েছে শিশুরা। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত রামথুই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দেয়া এক লিখিত অভিযোগ পত্রে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। .

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রামথুই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ময়ই থিং সহ কাগজে পত্রে ৪ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১ জন, সহকারী শিক্ষক ১ জন এবং খন্ডকালীন ও প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষক রয়েছে ২জন। এই চারজন শিক্ষকের মধ্যে পালাক্রমে ১জন শিক্ষক স্কুলের উপস্থিত হয়ে পাঠদান করেন। বাকী শিক্ষকদের সপ্তায় একদিনও উপস্থিত পাওয়া যায় না বিদ্যালয়ে। শিক্ষকদের সামান্য বেতনে রাখা একজন বর্গা শিক্ষক বর্তমানে স্কুলটি চালাচ্ছেন।

শিক্ষকদের ক্রামাগত অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে গত মে মাসের ১৯ তারিখ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিবাবক ও স্থানীয় গন্যমান্যব্যক্তিদের সমন্বয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দানে ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি আলোচ্য বিষয়ে উঠে আসে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা তুলে ধরে বিষয়টি লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেন। বিগত ২ মাসেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে  গত ১৭ জুলাই লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।

অভিযোগে আরো জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি পদে মং ফো চিং মারমা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এসএমসি’র কমিটি কখন করা হয় সে বিষয়ে কমিটির বাকী সদস্যরা কোন কিছু জানেন না। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বউদ্যোগী হয়ে সভাপতিকে ডেকে নামমাত্র কমিটি করে নিজের স্বার্থে নিজের মনগড়া ভাবে স্কুলটি পরিচালনা করে আসছেন। ফলে রামথুই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের মান দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনিহাসহ বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে দাবী করেছেন স্থানীয় লোকজন।

ত্রিশ ডেবা পাড়ার বাসিন্দা মং খিং মারমা জানান, শিক্ষকদের অবহেলার কারণে স্কুলটি ধ্বংস হওয়ার পথে। স্কুলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও অনেক সময় তা সময় মতো নামানো হয় না। কোন ধরনের জাতীয় দিবস পালন করা হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা জাতীয় দিবস পালন সম্পর্কে কোন ধারনা পায় না। তিনি আরো জানান, এই বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করে নিজ উদ্যোগে অনেক কষ্ট করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। তৎকালিন শিক্ষকদের আন্তরিকতা ছিল বলেই তিনি আজ শিক্ষিত হতে পেরেছেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সে ধরনের আন্তরিকতা নেই। যার কারণে শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ছে শিশুরা। শিক্ষকদের অনিয়মের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

এদিকে ত্রিশডেবা পাড়া থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক পদে নন্দবোধি শ্রমন (বর্তমানে গজালিয়া ইউনিয়নের রেমং মেম্বার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত) এবং প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক পদে  অং শৈ ছিং মারমা ( বর্তমানে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দোছড়ি মগ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত) এই ২ শিক্ষককে রামথুই পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হলে নিজ এলাকা হিসেবে একদিকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে অন্যদিকে বিদ্যালয়ের পরিবেশের পরিবর্তন আসবে বলে ধারনা করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ত্রিশডেবা পাড়ার গন্যমান্য ব্যক্তিরা।